সৈয়দা সাজেদা খসরু নিশা : ফসলের জমিতে গাছের মরা ডাল, কঞ্চি বা বাঁশের আগা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার নাম পার্চিং। পার্চিংয়ে পাখি বসার সুযোগ পেলে তার দৃষ্টিসীমায় কোনো ক্ষতিকর পোকা দেখা মাত্রই সেটা সে ধরে খাবে।
এভাবে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধান ক্ষেতের পোকার আক্রমণ কমিয়ে বেশি ফলন পাওয়া যাবে। বিষবিহীন নিরাপদ ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে এটা একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতি ধান চাষীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পার্চিং হলো ধান ক্ষেতে ডাল-কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। যেহেতু ধানের জমিতে পাখি বসার মতো তেমন কোনো গাছ নেই। তাই যদি কৃত্রিমভাবে ডাল, কঞ্চি বা বাঁশের আগা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ কমে যাবে এবং ধান ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাবে
পার্চিং একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিভিন্ন ফসল বিশেষ করে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কীটনাশকের অযাচিত ব্যবহার কমবে; ফসল উৎপাদন বাড়বে। মাটি, পানি তথা পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে ও ইকোসিস্টেম অক্ষুন্ন থাকবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। সর্বোপরি নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের পদ্ধতির নাম ‘পাচিং’।ধানখেতের মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে পাখিগুলো আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি।ধানখেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। এই পোকা ধান গাছে গর্ত করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মাজরার মথ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ বাচ্চার জন্ম হয়। শুধু একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই লাখের উপরে পোকা ধ্বংস করা সম্ভব।
এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা। পোকা দমনের এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পার্চিং ইংরেজি শব্দ। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকে পার্চিং নামের উদ্ভব। পার্চিং পদ্ধতি কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব। পার্সিং দুই প্রকার- ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং ধইঞ্চা, কলাগাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের এই পদ্ধতি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
পার্চিং পদ্ধতি হলো বোরো ধানের জমির মধ্যে বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালা পুঁতে দেওয়া। যার উপরে পাখিরা এসব ডালে বসে পোকা ধরে খেয়ে ফেলে। এর মাধ্যমে পোকার আক্রমণ কম হয় এবং কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার হয়। যার ফলে ধান উৎপাদনে কৃষকদের খরচের পরিমাণ
ধান খেতে পোকা দমনে এ পদ্ধতি শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কার্যকর। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় বোরো চাষিদের প্রতি একরে কীটনাশক খাতে খরচ কমেছে দেড় হাজার টাকারও বেশি।
বোরো ধানে পোকা দমনে কৃষকরা ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে শত্রু পোকা নিধনের সাথে বন্ধুপোকা মারা যায়। এছাড়া কীটনাশকের ব্যবহারে মানবদেহে রোগব্যাধিসহ নানা ধরণের ক্ষতি হয়ে থাকে।আর কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে পার্চিং পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন মাঠে পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমন করছে কৃষকরা।
লেখক: শিক্ষার্থী (বিএসসি ইন এগ্রিকালচার) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।