বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

লোনা জলের আতংকে খুলনার উপকূলবাসী

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার উপকুলীয়  কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী। প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধের অধিকাংশ জায়গা রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। ফলে আম্ফানের ক্ষত শুকিয়ে উঠার আগেই পুনরায় যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে যেতে পারে এলাকার মানুষের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, মৎস্য ঘের, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে এলাকার হাজারো মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারে পানিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে চুইয়ে ও ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে নদীর পানি এলাকায় প্রবেশ করছে। কয়েকজন পানি বন্ধের জন্য তাৎক্ষণিক কাজ করছেন। যারা কাজ করছে তাদের নদীর অপর পাশে মৎস্য ঘের রয়েছে। মৎস্য ঘেরে নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি উঠানো হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

স্থানীয় মৎস্য চাষি মতিয়ার রহমানকে বাঁধে কাজ করতে দেখা যায়। তিনি এ বলেন,ঝুঁকিপুর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে নদী ও তার ঘের তলিয়ে যেতে পারে। এছাড়া বাঁধ ভাঙলে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবে ।

আরেক মৎস্য চাষি নাসির জানান, গত বছর আম্ফানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তার দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি লিজ নিয়ে ঘের (মৎস্য চাষ) করেন। এবার ভেঙে গেলে তার চরম ক্ষতিতে পড়তে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বাঁধ মেরামতে সরকারি বরাদ্দ হয়েছে। তবুও কাজ করতে গড়িমসি করায় আজ এ অবস্থা। আবারও যেকোনো মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও ) মশিউল আবেদীন বলেন,পানি প্রবেশের সংবাদ শুনেছি। তাৎক্ষণিক পানি বন্ধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া ১৪ ফুট রাস্তা চওড়া করে ৪৮০ মিটার রাস্তার কাজও চলমান রয়েছে। অপরদিকে জাইকার অর্থায়নে হোগলা থেকে এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ করা হবে।

উল্লেখ্য, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ গেল বছরের এপ্রিল মাসে জোয়ারের পানি বাড়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। খবর পেয়েই স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে পারলেও মে মাসের আম্ফানে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। আম্ফানে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এর আগে ২০০৯ সালে আইলার সময়ও ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে চরম ক্ষতি হয়।

This post has already been read 3072 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …