চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ বিপর্যয় রোধে তেল, গ্যাস ও কয়লা ভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানির উন্নয়ন প্রকল্পে এডিবির সহায়তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এ বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লুজিইডি), আইএসডিই বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব দাবি উত্থাপন করেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় অবিলম্বে নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ও এসংক্রান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি করেন। তবে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গতি আনাই জলবায়ু রক্ষার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নয় বলে মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানী খাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর বিনিয়োগ শুধু দেশকে দেনায় জর্জরিত করছে না, বরং পরিবেশ ও জলবায়ুর মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে প্রায় ৬.১৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যার ৯৮ ভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে। বিগত ১০ বছরে, সবমিলিয়ে ৯,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে এডিবি, যা প্রতিবছর গড়ে ১৯.৩ মিলিয়ন টন কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী।
তারা বলেন, আগামি ৩-৫ মে ২০২১ তারিখে, এডিবি’র বার্ষিক সধারণ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং এই সভায় এডিবি’র নতুন জ্বালানি নীতি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থা হিশেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার জন্য অবশ্যই এডিবির জ্বালানি নীতিতে সুস্পষ্ট এবং বাস্তবসম্মত প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি’র অর্থায়নে বাস্তবায়িত বেশিরভাগ প্রকল্পে স্থানীয় পরিবেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। অনৈতিকভাবে জমিদখল, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দেয়া, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়েই এডিবি’র বিনিয়োগে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প চলছে বলে দাবি করেন। বক্তারা বাংলাদেশের শতভাগ নবায়নযোগ্য জালানি নিশ্চিত করার জন্য এডিবি’র উদ্যোগ নেয়ার জোর আহ্বান জানান।
সংহতি জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন। ইশিকা ফাউন্ডেশনের জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, দক্ষিন জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, কলামিস্ট মোহাম্মদ মুসা খান, উত্তর জেলা কৃষক লীগের দপ্তর সম্পাদক সেলিম সাজ্জাদ, জেলা স্কাউটস এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুস সাকিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান, জাতীয় আবৃতি শিল্পি মেজবাহ চৌধুরী, কৃষিবিদ আরিফুল ইসলাম, সিএসডিএফ’র শাহীন আকতার ও আইএসডিই’র আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।