সোমবার , নভেম্বর ১৮ ২০২৪

লাম্পি স্কিন রোগের টিকা বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করলো এসিআই

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বিগত ৩ বছর ধরে বাংলাদেশের গবাদিপশু (গরু-মহিষ) খাতে নয়া আতংকের নাম লাম্পি স্কিন রোগ। বছরের এই সময়টাতে বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে রোগটি দেখা দেয়াতে গত বছর দেশের খামারিগণ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। লাম্পি স্কিন রোগ মূলত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি চর্মরোগ, যা গরুকে আক্রান্ত করে। এটি পশুর উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয় এবং অনেকক্ষেত্রে পশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায়। এমতাবস্থায় রোগটির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে খামারিদেরকে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি। বাংলাদেশের প্রাণিস্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এসিআই এনিমেল হেলথ নিয়ে এসেছে Bovivax LSD-N নামে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা, যা মরক্কোর কোম্পানি এম.সি.আই সানতে এনিমাল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিবন্ধিত ও জি.এম.পি স্ট্যান্ডার্ডে প্রস্তুতকৃত। দেশে রোগটির বর্তমান পরিস্থিতি ও খামারিদের আশুকরণীয় সমন্ধে পশুপালন খাতে জড়িত সবাইকে অবহিত করার জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে গত শনিবার (৮ মে) একটি অনলাইন সভার আয়োজন করা হয় এবং আমদানিকৃত লাম্পি স্কিন রোগের টিকা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কোঅর্ডিনেটর, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য  অধ্যাপক ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) -এর মহাপরিচালক ডা. মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।  অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং এসিআই এনিমেল হেলথ এর প্রধান উপদেষ্টা ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, এসিআই এনিমেল হেলথ এর চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজর ডা. এমএ ছালেক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজিস্ট (মহামারিবিদ) ডা. মোজাফফর গণি, এসিআই এনিমেল হেলথ এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহীন শাহ, ডিরেক্টর (সেলস্) ডা. আমজাদ হোসেন, বিজনেস ম্যানেজার ডা. মো. মঈনুল ইসলাম। সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এসিআই এনিমেল হেলথ –এর হেড অব মার্কেটিং ডা. হুমায়ূন আরেফীন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে এসিআই এনিমেল হেলথ এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহীন শাহ বলেন, এসিআই এনিমেল হেলথ সব সময় প্রাণিস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মানুষের প্রোটিন চাহিদা পূরণ নির্বিঘ্ন করা এবং সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে যা যা করা দরকার তাই করে।

তিনি বলেন, জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বের আবহাওয়াতেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে মানুষ ও প্রাণিকে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন রোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাড়ছে মশা-মাছিবাহিত রোগ। এসব প্যারাসাইট রোগগুলো এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণিও আক্রান্ত হচ্ছে এবং বিশেষ করে বছরের এই সময়টাতে আমাদের দেশে মশা ও মাছিবাহিত রোগ বেড়ে যায়।

মোহাম্মদ শাহীন শাহ আরো বলেন, দেশে হঠাৎ করেই গবাদিপশুতে লাম্পি স্কিন রোগের আক্রমণ এবং এটি বেড়ে যাওয়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির আমন্ত্রণ জানায়। আমরা সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ডিএলএস, বিএলআরই এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়  ভ্যাকসিন আমদানির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করার। আমদানিকৃত Bovivax LSD-N ভ্যাকসিনটি আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে রোগ ও খুঁতবিহীন গরু তৈরিতে সহায়তা করবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, এসিআই এনিমেল হেলথ বরাবরই যে কোন বিষয়ে পাইওনিয়ার হিসেবে কাজ কোম্পানিটি বরাবরই মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণ্যের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের কল্যাণ্যের জন্য কাজ করে। এসিআই এনিমেল হেলথ যে কাজটি করছে, আমরা নিজেরাও করছি প্রাণিসম্পদ ডিপার্টমেন্টও কাজ করছে, কিন্তু আমাদের ক্ষমতা কতটুকু সেটিও চিন্তা করতে হবে। আমাদের যে ল্যাবটি রয়েছে সেটি অনেক পুরনো ল্যাব, আমরা সেখান থেকেই চেষ্টা করছি প্রতিবছর ৩০-৩৫ লাখ ভ্যাকসিন উৎপাদনের যেটি আমাদের দেশের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

তিনি জানান, লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের ভ্যাকসিন আমদানিতে পাইওনিয়ার কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানায়। আমাদের আমন্ত্রণে তিনটি কোম্পানি সাড়া দেয় এবং তারা প্রথমে তাদের ভ্যাকসিনগুলো আমাদের কাছে জমা দেন। এরপর সেগুলো বিএলআরআই এর মাধ্যমে নানা যাচাই বাঁছাই শেষে ভ্যকসিনগুলো আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়। আজকের এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমি আশা করবো, সারাদেশের মানুষ ইতিপূর্বে এসিআইকে যেভাবে সাদরে গ্রহণ করেছে তেমনি Bovivax LSD-N ভ্যাকসিনটি সাদরে গ্রহণ করবে।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি, ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কোঅর্ডিনেটর, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, যে কোন নতুন রোগই খামারিদের ভীতিকর এবং সেটি কতটা ক্ষতিকর তা বর্ণনাতীত। তাই রোগবালাই নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সবার আগে প্রধান দায়িত্ব হলো রোগটি যাতে বেশি না ছড়াতে পারে সে ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া। এটি যদি ক্ষুরা রোগের মতো চিরস্থায়ী রুপ ধারন করে তবে সেটিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা পূরণ অত্যন্ত কস্টকর হবে।

আমরা সাধারণত তিনটি নিয়মের কথা বলে থাকি এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে এবং সেগুলো হলো- প্রতিরোধ, যেখানেই রোগটি হবে সেটি দ্রুততার সাথে নির্ণয় করা এবং তার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার, খামারি কিংবা প্রাইভেট সেক্টর এককভাবে কেউ পালন করতে হবে না। সুতরাং এক্ষেত্রে উক্ত ত্রিপক্ষীয় একটি শক্তির টেকনিক্যাল আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার যাতে রোগটি দেশে স্থায়ী কোনভাবেই রুপ নিতে না পারে।

এ ধরনের রোগ দ্রুত নির্মূলের জন্য ভ্যাকসিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এসিআই যে ভ্যাকসিনটি বাজারে নিয়ে আসছে সেটি অত্যন্ত কার্যকর এবং উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন যা অনেক জায়গায় এটি প্রমাণিত। কিন্তু শুধু ভ্যাকসিন থাকলেই চলবে না সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার এবং তার জন্য একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে লক্ষ্য নির্ধারন করেতে হবে যাতে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত থাকে। এ সময় তিনি ভ্যাকসিনের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনে সরকার প্রয়োজনে সেখানে বিনিয়োগ করবে।

এসিআই এনিমেল হেলথ এর চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজর ডা. এমএ ছালেক বলেন, খামারি ভাইয়েরা খামারি পরিচালনা করতে যেয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হয়ে থাকেন যার মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ অন্যতম। রোগটি প্রতিরোধ ও খামারিদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারী পরামর্শ দেন ভ্যাকসিনটি দ্রুত আমদানি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের।

’এসিআই এনিমেল হেলথ মরক্কোর কোম্পানি এমসি সানতে এনিমাল থেকে Bovivax LSD-N নামে লাম্পি স্কিন রোগের যে ভ্যাকসিনটি নিয়ে এসেছে সেটি বিশ্বের স্বনামধন্য একটি কোম্পানি এবং এটি ইউরোপীয়ান জিএমপি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত। এটিই একমাত্র ভ্যাকসিন যা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রেজিস্টিকৃত। ভ্যাকসিনটি ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং কার্যকরি ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে’ যোগ করেন ডা. এমএ ছালেক।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. মোজাফফর গণি বলেন, লাম্পি স্কিন খুবই মারাত্মক একটি রোগ। কারণ, রোগটি একস্থান থেকে আরেকস্থানে খুব দ্রুত ছড়ায়। রোগটি যদি প্রথমদিকেই নির্মূল করা যেতো তবে রোগটি এতটা বিস্তৃতি লাভ করতো না। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রথমদিকেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারিনি। রোগটি যেহেতু ব্যাপক আকারে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাই এটি আস্তে আস্তে নির্মুল করা সম্ভব। ভ্যাকসিন হলো রোগটি নির্মুলের প্রধানতম অস্ত্র।

অনলাইন সভায় স্লাইড প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ডা. মোজাফফর গণি জানান, মূলত গবাদিপশুর চামড়াতেই রোগটির প্রধান লক্ষণ দেখা যায়। দুগ্ধবতী গাভীতে এ রোগটি বেশি হয়। রোগটি কেবল গরু ও মহিষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত দেখা যায়। মশা, মাছি এবং Ticks নামক পোকার মাধ্যমে রোগটি ছড়ানো মূল বাহক।

তিনি লাম্পি স্কিন রোগটির শুরু থেকে বর্তমান ইতিহাস এবং বাংলাদেশে রোগটি অঞ্চলভিত্তিক আক্রান্তের তথ্য তুলে ধরেন। বর্তমান আবহাওয়ায় যেহেতু পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি তাই রোগটি ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি, বলে জানান তিনি।

ডা. মোজাফফর গণি ওসমানি গবাদিপশুকে রোগটি থেকে দূরে রাখতে খামারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেন এবং খামারে মশামাছি নিমূর্লে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন। রোগটি নির্মূলে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন। লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণে খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, আক্রান্ত পশুকে কোয়ারেনটাইনে রাখা, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে জোরদারকরণ, খামারিদের সচেতনতা তৈরির ওপর পরামর্শ দেয়া হয় প্রেজেন্টেশনে।

অনলাইন সভায় এসিআই এনিমেল হেলথ –এর বিজনেস ম্যানেজার ডা. মো. মঈনুল ইসলাম ভ্যাকসিনটির কার্যকরিতা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে রোগ কন্ট্রোল স্ট্রাটেজি মূলত দুই প্রকার, একটি হলো Heterologous এবং Homologous. আমরা যে ভ্যাকসিনটি নিয়ে আসছি সেটি হলো Homologous এবং এটি সরাসরি ক্যাটল স্ট্রেইন থেকে তৈরি করা। এই স্ট্রেইন একটি শক্তিশালী ও টেকসই প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে।এটিই একমাত্র ভ্যাকসিন যেটি ইউরোপীয় রেজিস্ট্রিকৃত। এছাড়াও ভ্যাকসিনটি গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রেজেন্টেশনে ভ্যাকসিন ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন ডা. মঈনুল।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) -এর মহাপরিচালক ডা. মো. আবদুল জলিল বলেন, লাম্পি স্কিন রোগের কারণে বিগত কয়েক বছরে দেশের খামারিদেরমারাত্মক ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বিএলআরআই বিগত এক বছর ধরে ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সেটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা অতি তাড়াতাড়ি এলএসডি ভ্যাকসিন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, লাম্পি স্কিন প্রতিরোদে এলএসডি ভ্যাকসিনটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশের খামারিদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন,  গত বছর কোরবানির ঈদের আগে আমার খামারের ১৪০টি গরু লাম্পি স্কীন রোগে আক্রান্ত হয় এবং ভ্যাকসিনের অভাবে উক্ত গরুগুলো কোরবানির বাজার ধরতে পারিনি। দেশের খামারিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমদানিকৃত ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করার অনুরোধ জানান তিনি যাতে আসন্ন ঈদে গত বছরের মতো বেগতিক অবস্থা না হয়। আমদানিকৃত ভ্যাকসিনটির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানান এ সময় তিনি।

’আরো কিছু ভ্যাকসিন আমাদের প্রয়োজন যেমন-নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন এ মুহূর্তে আমাদের জরুরিভাবে দরকার। এসিআইকে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের পাইওনিয়ার কোম্পানি এবং মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করে বলে নিজে তাদের বড় একজন কাস্টমার উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ সেক্টরে ইনোভেটিভ টুলস আমদানির জন্য এসিআই এনিমেল হেলথ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারীর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং এসিআই এনিমেল হেলথ এর প্রধান উপদেষ্টা ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, লাম্পি স্কীন রোগটি বর্তমানে যে অবস্থানে আছে আশা করি সেটি তাড়াতাড়ি নির্মূল করতে আমাদের জন্য কঠিন হবে না। কারণ, রোগটি যখন আমরা ২০১৯ সনের মে মাসে সনাক্ত করতে পারি তখন তিনমাসের মধ্যে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশক্রমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ওপেন করে দেয়া হয়। ভ্যাকসিন আমদানির ব্যাপারে সরকার যখন গ্রীন সিগনাল দেয় তখন থেকে এসিআই ভ্যাকসিনটি দ্রুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এসিআই এর জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হলো ভ্যাকসিনটি খামারিদের নিকট দ্রুত পৌঁছে দেয়া এবং আমাদের বিশাল কর্মীবাহিনীর জন্য সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন সকল পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রোগটি নির্ণয়ে ভ্যাকসিনেশনের বিকল্প নেই এবং সেটি আমাদের করতে হবে।

সারা বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটি খামারিগণ কিভাবে পাবেন সে ব্যাপারে আলোচনা করেন এসিআই এনিমেল হেলথ –এর ডিরেক্টর (সেলস্) ডা. আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার জন্য নারায়ণগঞ্জে আমাদের কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার রয়েছে যেখানে খুবই কঠোরভাবে কুলচেইন মেইনটেইন করে সারা বাংলাদেশে অবস্থিত ১৭টি ডিপোতে পাঠানো হয়। যারা ভ্যাকসিনগুলো অপারেট করে তাদেরকে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং তারা কেবল ভ্যাকসিনগুলোই দেখাশুনা করে। উক্ত ডিপোগুলো থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের প্রায় ২০ হাজার ডিলার ও খুচর দোকানদারের কাছে পৌঁছে যায় এবং সেখান থেকে খামারিদের কাছে সময়মতো পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে প্রায় ৫ হাজার জনের বেশি বিশাল কর্মীবাহিনী।  টেকনিক্যাল সার্ভিস নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভেটেনারিয়ান, যারা খামারিদের ভাইদের প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছেন।

উল্লেখ্য, গবাদিপ্রাণীতে লাম্পি স্কিন রোগটি ১৯২৯ সালে আফ্রিকার জাম্বিয়াতে দেখা দেয়। রোগটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

This post has already been read 29361 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …