স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আজ পর্যন্ত জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। জমি কমেছে অথচ খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। প্রতিবছর এক শতাংশ হারে ৫০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জনসংখ্যা প্রতি বছর ১.৫৪% হারে বাড়ছে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য একই জমিতে প্রতিনিয়ত চাষাবাদ এবং মাত্রাঅতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে দিন দিন মাটি তার প্রান শক্তি কার্বন ও জৈব উপাদান হারাচ্ছে। এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে চলতে থাকলে মাটি অচিরেই কার্বন শূন্য হয়ে তার ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারাবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে জৈব প্রযুক্তিতে চাষাবাদ অতীব জরুরী। আন্তর্জাতিক জৈব প্রযুক্তি সম্মেলনে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ’শুধু জৈব প্রযুক্তি দিয়ে অতিরিক্ত ৩ কোটি মেট্টিক টন খাদ্য উৎপাদন সম্ভব’। বলা বহুল্ল যে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য মাটিতে বায়োচার ও বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার ব্যবহার (কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার) হতে পারে একমাত্র হাতিয়ার।
বায়োচার এক ধরনের চার বা কয়লা যার মধ্যে ৩০-৫৫% কার্বন থাকে। এই কয়লা এক ধরনের চুলা (”কৃষি বন্ধু চুলা”) ৩০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বল্প অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এবং পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োমাস (কাঠ, খড়-কুটা এবং কৃষি বজ্য) পুড়িয়ে বায়োচার তৈরী করা হয়। বায়োচার মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির কার্বন/ জৈব উৎপাদান বৃদ্ধি পায়, লবনাক্ততা হ্রাস করে, পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ে, রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, পুষ্টি উৎপাদান ধরে রাখে, মাটির বিষাক্ত পদার্থ ফসলে আসতে দেয় না, মাটিতে অবস্থানকারী অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট মোকাবেলায়- কৃষিতে বায়োচার একটি উত্তম অনুষঙ্গ।
বায়োচার তৈরীর নতুন প্রযুক্তি ”কৃষি বন্ধু চুলা”য় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রান্না, জ্বালানী ও সময় স্বাশ্রয়, অগ্নি দূর্ঘটনা ও বায়ু দুষন ুরোধ, কার্বন নিঃস্বরন কমানো এবং উৎপাদিত বায়োচার ব্যবহার করে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিকে সময় উপযোগী সুকৌশল বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানি ও কর্মকর্তাগণ। অপরদিকে ”কৃষি বন্ধু চুলা” থেকে যে বায়োচার উৎপাদিত হবে তা বিক্রি করে ব্যবহারকরীর পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন হবে এবং বায়োচার জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির উন্নয়নের পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি পাবে। সিসিডিবি বায়োচার প্রকল্প এলাকা শিবালয় ও মান্দা উপজেলায় বায়োচার ব্যবহার নিয়ে কৃষক-কৃষানীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ICCO এবং Kerk in actie এর আর্থিক সহায়তা ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় ”খ্রীষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইর বাংলাদেশ” (সিসিডিবি) মাঠ পর্যায়ে বায়োচর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করছে। বায়োচার প্রকল্পের শিবালয় কর্ম এলাকায় ১২০টি পরিবার ”কৃষি বন্ধু চুলা” ব্যবহার করছেন এবং চুলা থেকে উৎপাদিত বায়োচার বিক্রি করে আর্থিকবাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজের জমিতে বায়োচার ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করে অধিক ফসল ঘরে তুলছেন। সিসিডিবি বায়োচার প্রল্পের মাধ্যম চলতি মে’২০২১ মাসে অত্র শিবালয় কর্ম এলাকায় আরও ২৫০টি পরিবারে ”কৃষি বন্ধু চুলা” প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে যা পর্যায়ক্রমে স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
বর্তমানে সিসিডিবি’র বায়োচার প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে বায়োচার ব্যবহারকারী কৃষকের জমিতে ডেমো স্থাপস, বায়োচারের কার্যকারীতা পরীক্ষন ও বায়োচার ব্যবহার এবং গবেষণা কাজের সাথে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট, হাজী দানেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় সম্পৃক্ত রয়েছেন।