নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের দুগ্ধ শিল্পকে বিকশিত করে বিশ্বমানে উন্নীত করা হবে এবং এ জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মঙ্গলবার (০১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ও দুগ্ধ সপ্তাহ, ২০২১ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, “দুগ্ধজাতীয় পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বৈচিত্র্য আনয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতীয় পণ্য বৃদ্ধি করার জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। এজন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বেসরকারি খাতকে বিকশিত করার জন্য যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, এ পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্র নেয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বহু পূর্বে ২০০১ সালে ১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস নির্ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দুগ্ধ দিবসের ভাবনা আমরা কতটা কার্যকর করতে পারছি সেটা ভাবতে হবে এবং কাজে লাগাতে হবে। আমরা সাভারে আন্তর্জাতিকমানের মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন করেছি, যার মাধ্যমে দুধ মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কীনা সেটা পরীক্ষা করা যাবে। পুষ্টি মানসমৃদ্ধ দুধের জন্য এর উৎসে থাকা গবাদিপশুর খাবারের মান অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু দুধ খেলেই হবে না, দুধ হতে হবে মানসম্মত।
“করোনকালে প্রাণি খাদ্য ও মৎস্য খাদ্য আমদানির সমস্যা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে দূর করেছি। দুধ উৎপাদনকারী ও ভোক্তাদের জন্য আমরা ভ্রাম্যমান বিক্রয় ব্যবস্থা করেছি। এতে উৎপাদক ও ভোক্তারা লাভবান হয়েছেন। এভাবে করোনায় আমরা গোটা দুগ্ধ খাতকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি।”-যোগ করেন মন্ত্রী।
এ সময় দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী। সরকার এ সংক্রান্ত সকল প্রকার সহযোগিতা দেবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নের বিষয়টি নিজের মধ্যে ধারণ করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “দেশের মানুষের মেধা বিকাশের জন্য অন্যতম আদর্শ খাদ্য হলো দুধ। দুধের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাবে। মানসম্মত দুধ উৎপাদন করতে পারলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যাবে। একটা সমৃদ্ধ জাতি তৈরি হবে, যে জাতি দেশকে উন্নয়নের অগ্রশিখরে নিয়ে যাবে। এজন্য দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস নিতে হবে। সরকার সবসময় পাশে থাকবে।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ শেখ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল জলিল এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ্ মোঃ ইমদাদুল হক, শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি ও মোঃ তৌফিকুল আরিফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ, ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি এবং প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যেক্তা ও খামারিগণ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-এর প্রাক্তন ডীন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ১ জুন তারিখকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছর থেকে বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত করাকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে। বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “Sustainability in the dairy sector with messages around the environment, nutrition and socio-economics.” মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ বছর দেশব্যাপী ১ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপন করছে।