নিজস্ব প্রতিবেদক: মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, মাশরুম উৎপাদন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশেই মাশরুম আমদানি করে থাকে । বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।
রবিবার সাভারে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে মাশরুম চাষি ও উদ্যোক্তাদের সাথে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি‘র মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ও সারা দেশে মাশরুমের চাষ সম্প্রসারণ করতে প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি এ সময় বলেন, দেশে অর্থকরী ফসল মাশরুম চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। ইতোমধ্যে মাশরুমের উন্নত জাত ও চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এখন সারা দেশে দ্রুততার সাথে কৃষক ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। সেজন্য, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য উদ্যোগও অব্যাহত আছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও নানান প্রণোদনার ফলে বিগত ১২ বছরে কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের এখন লক্ষ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও লাভজনক করা এবং সকলের জন্য পুষ্টিসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে মাশরুমের সম্ভাবনা অনেক। এটির চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে যারা চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা করতে পারলে মাশরুমের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি হবে। অন্যদিকে, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় সহজেই মানুষের পুষ্টি চাহিদার অনেকটা পূরণ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ এর সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (সম্প্রসারণ) মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জরুল আলম রাজিব, পৌর মেয়র আব্দুল গণি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সারাদেশ থেকে মাশরুম চাষী ও উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
‘বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা, সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আহমেদ। প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। একদিকে, মাশরুম একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার, অন্যদিকে তা চাষ করার জন্য কোন আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার যোগান দেয়ার জমি প্রতিবছর কমছে। এই অবস্থায়, অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া, বাংলাদেশের আবহাওয়া সারাবছর মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। দেশে মাশরুম চাষের উৎপাদন মাধ্যমের (যেমন খড়) পর্যাপ্ততা রয়েছে। মাশরুম চাষ পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল।
মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে মাশরুমের ১৬২টি জাত দেশে এনেছে এবং সেগুলো দেশে চাষের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। দেশের পাহাড়ি ও বনাঞ্চল থেকেও ১৪০ টি জাত সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, ইনস্টিটিউটে মাননিয়ন্ত্রণ ও মাননিশ্চিত করণে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাবে মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধিগুণসহ ভিটামিন, মিনারেল প্রভৃতি নির্ণয় করা হচ্ছে।