Friday , March 28 2025

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে নতুন প্রযুক্তি ও খাদ্য উদ্ভাবনে খুবি’র গবেষকদের সাফল্য

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা :  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কয়েকটি প্রজাতির মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। একই বৃষ্টির পানি গুণাগুণ রক্ষা করে বিনা অপচয়ে বা পুনরায় পানি ব্যবহার না করেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। এছাড়া গবেষকরা মাছের এমন একটি সাশ্রয়ী মূল্যের শর্করাপ্রধান খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন যাতে মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রকৃত স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ অক্ষুণ্ন থাকে।

আজ বুধবার (৩০ জুন) বেলা ১১টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এই গবেষণা প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। তিনি বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র পরিসরে মাছ চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তি যাতে চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফল উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছালে তারা তা ব্যবহার করে আর্থ-সামাজিকভাবে লাভবান হতে পারে। ফলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। করোনা মহামারির মধ্যেও গবেষণা অব্যাহত রাখা এবং এই গবেষণা কাজে পিএইচডি, স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট করায় তিনি প্রকল্পের প্রধান ইনভেস্টিগেটর ও সমন্বয়কারীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও গবেষণামুখী করতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ব্যক্ত করে বিশেষ করে নবীন গবেষকদের প্রতি গবেষণায় সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে নিজস্ব গবেষণা ফান্ড বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসময় জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

প্রকল্পের প্রধান ইনভেস্টিগেটর ও সমন্বয়ক ড. মোঃ নাজমুল আহসান জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ুতে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে ইন্টার ডিসিপ্লিনারি গবেষণার অপরিহার্যতাকে সামনে রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সলিডারেট এশিয়া ও ওয়ার্ল্ড ফিসের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ক্লাইমেন্ট রেসিলেন্স কোস্টাল ফুড সিস্টেম প্রতিষ্ঠা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। যার আওতায় বিভিন্ন ধরণের প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। করোনার সময়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধকালীন ডিসিপ্লিনের গবেষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীবৃন্দ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই গবেষণা চালিয়ে গেছেন। উক্ত সেন্টার অব এক্সিলেন্স এর আওতায় ২০২০ সালের শুরু থেকে পুকুরের পানিতে গলদার পোনা উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয় এবং তা মৎস্যচাষীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যা এতদাঞ্চলে গলদা রেণু উৎপাদনে হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রেণু উৎপাদনে যুগান্তকারী উদ্ভাবনা। এছাড়া বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উদ্যোক্তা অনুকূল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে মাছ উৎপাদনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। নতুন ধরণের লো-কস্ট ফিসফিড উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকৃত স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই গবেষণায় সম্পৃক্ত থাকায় তারা প্রায়োগিক গবেষণা সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। যা তাদের বহুমুখী গবেষণায় কাজে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো জানান, এই প্রকল্পে তারা বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন। শহরে, শহরতলী বা আগ্রহী চাষী স্বল্প জায়গায় এ পদ্ধতিতে অল্প খরচের মধ্যে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করতে পারবেন। তারা তেলাপিয়া, শিং, কৈ ও টেংরা মাছ নিয়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে টেংরা মাছ ছাড়াও অন্য তিনটি মাছের ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন। বৃষ্টির পানিতে এই মাছ চাষ হওয়ায় এবং পানির গুণাগুণ রক্ষায় মাছের প্রকৃত স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ ফিরে পেয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে তাদের তৈরি শর্করাবান্ধব প্রাকৃতিক খাবার ভালো কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন। সাধারণত মাছের খাবার তৈরিতে আমিষজাত এবং গ্রোথজাত উপকরণ বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তারা যে নতুন ফিসফিড তৈরি করেছেন তাতে একদিকে যেমন কোন গ্রোথ হরমোন বা অজৈবিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি, অন্যদিকে এতে এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পূর্ণ জৈবিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মাছের স্বাদ বাড়ায়। এসময় কো-ইনভেস্টিগেটর সহকারী অধ্যাপক সুদীপ দেবনাথ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন

This post has already been read 4421 times!

Check Also

জেলে নিবন্ধন তালিকায় নারী মৎস্যজীবীদের অগ্রাধিকার দিতে চাই -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

মনপুরা (ভোলা) : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মৎস্যজীবীদের তালিকায় অনেক অমৎস্যজীবী অন্তর্ভুক্ত …