রবিবার , সেপ্টেম্বর ৮ ২০২৪

বটম ক্লিন (আরএএস)পদ্ধতিতে মাছ চাষের আদ্যোপান্ত (প্রথম পর্ব)

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: বটম ক্লিন (আরএএস) পদ্ধতিতে পুকুর প্রস্তুতি থেকে মাছ বিক্রি পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা  সমূহ কয়েকটি পর্বে আলোচনা করবো। আজকে করা হলো নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি ও পোনা অবমুক্তকরণ প্রসঙ্গে-

নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি:

১. পুকুরের পানি নিষ্কাশন, তলদেশের কাদা অপসারণ এবং পুকুর রৌদ্রে শুকানো এবং নতুন পুকুর হলে তলদেশ চাষ দেওয়া বাঞ্ছনীয় ।

২. পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে পানির পরিমান কমাতে হবে ( ২ ফুট বা তার নিচে) তারপর রোটেনন/তামাকের গুড়া/চা বীজের খৈল/ফসটক্সিন ট্যাবলেট প্রয়োগ করে রাক্ষুসে বা অবাঞ্চিত মাছ দূর করতে হবে। আগাছা নিধন করতে হবে।

৩. পুকুর কাটার পর প্রয়োজনীয় চুন প্রতি শতাংশে ৫০০গ্রাম-২ কেজি  পোড়া চুন সকল জায়গায় সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরের মাটির পিএইচ মান নির্ণয় করে চুনের পরিমান নির্ধারণ করতে হবে।

৪. চুন প্রয়োগের ১-২ দিন পর নার্সারী পুকুরে ৪-৫ ফুট পানি ঢুকাতে হবে। পুকুরে পানি ঢুকানোর সময় কোন অবস্থায় বাইরে থেকে কোন প্রকার অবাঞ্ছিত মাছ বা আগাছা প্রবেশ করতে না পারে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. পুকুরে পানি প্রবেশ করানোর ১দিন পর পানিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করার জন্য প্রতি একরে ৫০০ মিলি হিসেবে একুয়া সাইড প্লাস অথবা ভাইরোকিল একুয়া (AQUAXIDE PLUS/VIROKILL AQUA) প্রয়োগ করতে হবে, পুকুরকে ক্ষতিকর পোকা মাকড়, উকুন ও বহিঃ পরজীবি মুক্ত করতে প্রতি একরে ৪ ফুট পানির জন্য ৫০  মিলি প্যারাটিক্স (PARATICS) প্রয়োগ করতে হবে।

নার্সারি পুকুরে পোনা অবমুক্তকরণ

১ম সপ্তাহ

  • ৪০০০ পিস = ১ কেজি পোনা ছাড়া উত্তম অর্থাৎ প্রতিটি পোনার ওজন অনুমানিক ০.২৫ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • পোনা ছাড়ার পূর্বে জীবাণুনাশক প্রয়োগ করার ০৩ দিন পর BIOTICS (৩-৪ ফিট গভীরতা) প্রতি একরে ৭ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
  • পোনা ছাড়ার পর খাদ্য হিসেবে নার্সারি পাউডার দিতে হবে।
  • নার্সারি পাউডার দিনে ৪ বার (সন্ধ্যা ৬.০০, রাত ১১.০০, রাত ২.৩০ এবং ভোর ৫-৬ টায়) মোট মাছের ওজনের ৩০ % হারে দিতে হবে।
  • Aqua Bac P (Gut probiotics) প্রতি একরে ২০০ গ্রাম করে টানা ০৭ দিন দিতে হবে পুকুরে।

২য় সপ্তাহ

  • ২০০০ পিস = ১ কেজি সাইজ হলে অর্থাৎ প্রতিটি মাছের ওজন অনুমানিক ০.৫০ গ্রাম হলে , খাদ্য হিসেবে নার্সারি পাউডার দিতে হবে।
  • নার্সারি পাউডার দিনে ৪ বার (সন্ধ্যা ৬.০০, রাত ১১.০০, রাত ২.৩০ এবং ভোর ৫-৬ টায়) মোট মাছের ওজনের ৩০ % হারে দিতে হবে।

৩য় সপ্তাহ

  • Aqua Clear S , প্রতি একরে ৫০০ গ্রাম (৩-৪ ফিট গভীরতার জন্য) ০১ বার ব্যাবহার করতে হবে।
  • খাদ্য হিসেবে নার্সারি পাউডার দিতে হবে।
  • নার্সারি পাউডার দিনে ৪ বার (সন্ধ্যা ৬.০০, রাত ১১.০০, রাত ২.৩০ এবং ভোর ৫-৬ টায়) মোট মাছের ওজনের ২৫ % হারে দিতে হবে।
  • Aqua Bac P (Gut probiotics) প্রতি একরে ২০০ গ্রাম করে টানা ০৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে পুকুরে।
  • ১০০০ পিস = ১ কেজি সাইজ হবে অর্থাৎ প্রতিটি মাছের ওজন অনুমানিক ১.০ গ্রাম।

৪র্থ সপ্তাহ –

  • খাদ্য হিসেবে নার্সারি পাউডার দিতে হবে।
  • নার্সারি পাউডার দিনে ৪ বার (সন্ধ্যা ৬.০০, রাত ১১.০০, রাত ২.৩০ এবং ভোর ৫-৬ টায়) মোট মাছের ওজনের ২৫ % হারে দিতে হবে।
  • ৫০০ পিস = ১ কেজি সাইজ হবে অর্থাৎ প্রতিটি মাছের ওজন অনুমানিক ২.০ গ্রাম।

[খুব শীঘ্রই আসছে পরবর্তী পর্ব]

লেখক: চেয়ারম্যান, এডভান্স এগ্রোটেক (বিডি) লিমিটেড এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাকোয়া প্রোডাক্টস কোম্পানীজ এসোসিয়েশন (বাপকা)।

This post has already been read 2456 times!

Check Also

মাছের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন অর্জন করতে খামার যান্ত্রিকীকরণের …