নিজস্ব প্রতিবেদক: নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত মহামারীর কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পল্লী অঞ্চলে পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২০২১-২০২২ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য বিষয়াদি নিম্নরূপ:
- চলতি (২০২১-২০২২) অর্থবছরে ২৮,৩৯১.০০ (আঠাশ হাজার তিনশত একানব্বই) কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ২৬,২৯২ (ছাব্বিশ হাজার দুইশত বিরানব্বই) কোটি টাকা এর তুলনায় ৭.৯৮ শতাংশ বেশি। কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের জন্য ১১,০৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারী ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য ১৭,৩৪৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকসমূহ ২৫,৫১১.৩৫ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ২৬,২৯২ কোটি টাকার প্রায় ৯৭.০৩%। বিগত অর্থবছরে মোট ৩০,৫৫,১৬৬ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকসমূহের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৬,০৫,৯৪৭ জন নারী প্রায় ৯২৮৭.৯৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। উক্ত অর্থবছরে ২২,৪৫,৫১২ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭.৬৩৯.৯৩ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৭,৭৯৬ জন কৃষক প্রায় ৩৩.৯৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছুসময়োপযোগী বিষয় সংযোজিত হয়েছে। এ নীতিমালার উল্লেখযোগ্য নতুন সংযোজিত বিষয়সমূহ হচ্ছে-
- প্রাণিসম্পদ খাতের পোল্ট্রি উপখাতের আওতায় সোনালী মুরগী পালনের জন্য ঋণ প্রদান সংক্রান্ত ঋণ নিয়মাচার সংযোজন;
- প্রাণিসম্পদ খাতের পশুসম্পদ উপখাতের আওতায় মহিষ ও গাড়ল পালনের জন্য ঋণ প্রদান সংক্রান্ত ঋণ নিয়মাচার সংযোজন;
- কৃষি ঋণের সুদের হার ৯% হতে হ্রাস করে ৮% করা;
- ফসলভিত্তিক ঋণ নিয়মাচারে উল্লেখিত একর প্রতি ঋণসীমা কৃষকদের প্রকৃত চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি/হ্রাস করা;
- মৎস্য চাষের ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ঋণ সীমা বৃদ্ধি করা;
- ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত ঋণের তদারকি অধিকতর জোরদার করণের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
উল্লেখ্য, নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে চলতি মূলধন ভিত্তিক কৃষি খাতে (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুম ভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত) চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দ্যেশ্যে বিগত অর্থবছরের ১৩/০৪/২০২০ তারিখের এসিডি সার্কুলার নং-০১/২০২০ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিজস্ব অর্থায়নে ৫,০০০.০০ (পাঁচ হাজার) কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কীম গঠন করা হয়। উক্ত স্কীমটির মেয়াদ জুন’২০২১ মাসে সমাপ্ত হয়েছে।
আলোচ্য স্কীমের আওতায় তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক ৪,২৯৫.১৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে ব্যাংকসমূহ কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে ৪% হার সুদে ঋণ বিতরণের জন্য বিগত অর্থবছরের ২৭/০৪/২০২০ তারিখে এসিডি সার্কুলার নংঃ ০২/২০২০ জারি করা হয়। এ স্কীমটির মেয়াদ ৩০ জুন’২০২১ তারিখে সমাপ্ত হয়েছে। আলোচ্য সার্কুলারের আওতায় ব্যাংকসমূহ কর্তৃক জুন’২০২১ পর্যন্ত ৪,৮৮০.৭১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।