রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

রপ্তানিতে কৃষিপণ্য কতটা এগিয়ে

সৈয়দা সাজেদা খসরু নিশা:  বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে  পরিচিত।কৃষিই বাংলাদেশের প্রাণ। খাদ্য শস্য, উদ্যান ফসল, পাট, চা, পোলট্রি, ডেইরি, ফিশারিজ, বনজবৃক্ষ, মধু ইত্যাদির সমন্বয়ে এদেশের কৃষি খাত। বাংলাদেশে কৃষিপণ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পসহ কৃষিনির্ভর শিল্পের সম্ভাবনা ব্যাপক।  আমাদের দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিজাতপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

করোনা মহামারির মধ্যেই এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলকে পৌঁছে গেছে কৃষিপণ্য। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে খাতটির রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষি এবং কৃষিজাতপণ্য পৃথিবীর ১৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৯০ ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সংখ্যাই বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুর–জাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। বিস্কুট, রুটি–জাতীয় শুকনা খাবার রপ্তানি করে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানিগুলো ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি। তার বাইরে চা, শাকসবজি ও ফলমূলও রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশি কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্রধান প্রধান আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ইউএই, সৌদিআরব, কাতার, ইউএসএ, কানাডা, ইউকে, ভারত ইত্যাদি দেশ।

বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে রয়েছে। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, ফল উৎপাদনে ষষ্ঠ, কাঁঠাল উৎপাদনে  দ্বিতীয় ও আমে সপ্তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।এই ধারা বজায় রাখতে যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, তা অস্বীকার করা যাবে না।কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য পণ্য সংরক্ষণের দিকে ও পণ্যের গুণমানের দিকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশে কৃষি এবং কৃষিজাতপণ্য  উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। খাদ্যশস্য উৎপাদনে সরকার সার এবং বীজসহ বিভিন্নখাতে ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বর্তমানে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তাছাড়া হর্টেক্স ফাউন্ডেশন কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রযুক্তি গত ও বিশেষায়িত পরামর্শমূলক সেবা দিয়ে চলেছে।

এর মাধ্যমে আগামী দিনে দেশে এবং বিদেশে কৃষি পণ্যের বাজার বিকশিত এবং স্থিতিশীল হয়ে বাণিজ্যিক কৃষি স্থায়িত্ব রূপ পাবে।আর দেশীয় কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়লে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কৃষি অর্থনীতিও হবে গতিশীল।

লেখক: শিক্ষার্থী (বিএসসি ইন এগ্রিকালচার) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

This post has already been read 3802 times!

Check Also

বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে -কৃষি উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন,  বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন …