চট্টগ্রাম: ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারিরা একদিকে পোল্ট্রি ফিড, লেয়ারের বাচ্চার দামসহ অন্যান্য খরচ নিয়ে উৎপাদন খরচ ও বিক্রি করে খামার টিকাতে কঠিন সংগ্রামে ব্যস্ত। তারপরও প্রাণী সম্পদ অফিসের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মুরগি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে দেশী মুরগি বলে সোনালি মুরগি বিক্রি করে একশ্রেণির হোটেল রেস্তোরাঁগুলো ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করছে। অথচ সাধারণ ব্রয়লার পোলট্রি ও সোনালি মুরগি একই ফিড, ওষুধ খেয়ে থাকে শুধুমাত্র জাতের পার্থক্য ছাড়া কিছু নাই। কিন্তু ভোক্তারা দ্বিগুন বেশী দামে এই সোনালি মুরগি কিনছেন।
বুধবার (২৫ আগস্ট) নগরীর পর্যটন হোটেল সৈকতের সাম্পান কনফারেন্স হলে ক্যাব চট্টগ্রামে’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে “ওর্য়াকশপ অন মাকের্ট লিংকেজ উইথ কনজ্যুমারস, বায়ার অ্যান্ড মডেল পোল্ট্রি ফার্মারস টু প্রমোট পোল্ট্রি প্রোডাক্টস” শীর্ষক সভায় উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জসিম। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি ইলিয়াছ আহমেদ ভুইয়া, ক্যাব বিভাগীয় সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহনগরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বাবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব বদিউল আলম, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারণ সম্পাদক সেলিম জাহা্ঙ্গীর, সদরঘাট থানা সভাপতি শাহীন চৌধুরী, জামালখান ওয়ার্ড সভাপতি সালাহউদ্দীন, চান্দগাও থানা সভাপতি মো. জানে আলম, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ফারুকী, ক্যাব পশ্চিশ ষোলশহর ওয়ার্ড সভাপতি এবিএম হুমায়ুন কবির, পোল্ট্রি খামারী মোসলেম উদ্দীন, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ হাসান প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিতে খামারীদের উৎপাদন থেকে শুরু করে গৃহিনীর পরিবেশন পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের প্রতিটি ধাপকে সঠিকভাবে অনুসরন করা না হলে খাবার অনিরাপদ হয়ে যাবে। তাই ভোক্তা, ব্যবসায়ী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কোনভাবেই তা সফল হবে না। কারণ, জেলা প্রশাসন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা র্যাবের অভিযানের পর যে সমস্ত হোটেল রেস্তোরাকে জরিমানা করা হচ্ছে, পরের দিনই ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ঐ হোটেলে। অনেক সময় অভিযানের পর হোটেলের বিক্রি আরও বেড়ে যায়। তাই ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রির উৎসব বন্ধ করা যাবে না। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারীরা তৃতীয় পক্ষ মধ্যসত্বভোগীদের মাধ্যমে পোল্ট্রি মুরগী বিক্রি থাকেন। ফলে খামারী পর্যায়ে প্রতি কেজি মুরগীর দাম খামারী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান থাকে। ফলে খামারীরা একদিকে তাদের পণ্যের ন্যয্যমূল্য পায় না। অন্যদিকে ভোক্তারা বেশী দামে মুরগি কিনতে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে খামারীদের থেকে সমবায় ভিত্তিতে সরাসরি মুরগী ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হলে খামারী ও ভোক্তা উভয়ে লাভবান হবেন।
বক্তারা আরো বলেন, ক্যাব ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত মডেল পোল্ট্রি খামারগুলি বায়ো সিকিউরিটি সমৃদ্ধ(কন্ট্রোল শেড) খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছাড়াই ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করছে। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন এখন ব্যাপক প্রসার পেয়েছে। খামারে মুরগিগুলি এখন আর যত্রতত্র, অপরিস্কার, অপরিছন্ন স্থানে বড় হচ্ছে না। তবে মুরগি জবাইয়ের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ না হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় ঝুঁকি আছে। আবার সুপারশপ গুলিও তাদের ভেন্ডরদের মাধ্যমে যে সমস্ত উৎস থেকে মুরগি কিনে থাকেন, তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত কিনা তা জানা অনেক স্থানে সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়াও বায়োসিকিউরিটিযুক্ত, প্রাণী সম্পদ অফিসের লাইসেন্সপ্রাপ্ত, যথাযথ মান পরীক্ষা নিশ্চিত করে বাজারজাতকৃত মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্রয়লার মুরগি বাজারজাতকরণ জনপ্রিয় করতে হবে। ক্যাব চট্টগ্রামে এ ধরনের পোল্ট্রি মুরগির উৎসস্থল বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতকারী ও যথাযথ মান নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করে যথাযথ মান নিশ্চিত ও অন্যান্য কার্যক্রম বিষয়ে সম্যক ধারনা লাভের জন্য খামার পরিদর্শনের জন্য প্রাণী সম্পদ অফিস ও ক্যাব প্রতিনিধি কর্তৃক যৌথ পরির্দশন করে যথাযথ মান অনুসরণের মাধ্যমে মডেল খামারী গড়ে তুলেছেন। যারা ঐ এলাকা সমুহে অন্যান্য খামারীদের জন্য ও আদর্শ হিসাবে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে।