মো: আমিনুল ইসলাম (রাজশাহী) : আম মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ আম পাওয়া যায় ও জাত বৈচিত্র্য থাকে, শেষে এসে তা হয়ে যায় অনেকটা হাতেগোনা, আমের প্রচলিত জাতগুলোর মধ্যে আশ্বিনা সবচেয়ে শেষে পাকে, আশ্বিনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় আমের মৌসুম। আম মৌসুমের শেষ সময়ে আশ্বিনার পাশাপাশি যদি আরও কয়েকটা জাত থাকত, আরো কিছুদিন যদি গাছে গাছে আম থাকত, সবাই আমের স্বাদ নিতে পারত। প্রকৃতিই যেন আমপ্রেমীদের সেই ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছেন। প্রাকৃতিকভাবেই হওয়া একটি নাবি জাত নিজস্বতা নিয়ে সামনে এসেছে। আমটির বৈশিষ্ট্য দেখে অভিভূত চাঁপাইনবাবগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষি বিজ্ঞানীরা0।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার, এখানেই পারিবারিক বাগান রয়েছে আতিকুল ইসলাম আরমানের বাবা ও চাচাদের। প্রতি বছরই বাগানটি মুকুলেই আম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। তাদের বাগানে বিভিন্ন জাতের আমগাছের পাশাপাশি ৫টি গাছ ছিল গুটি জাতের। আম মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চলে তার আম কেনাবেচা। বাগানের অন্যসব জাতের আমপাড়া শেষ, বাগানের ওই ৫ গাছের আম তখনও পাকেনি তখন আমার মনে হয়েছে আমটা টেকসই ও দেরিতে পাকে। সেবার ৬ হাজার টাকা মণ করে আম বিক্রি করলাম। গত বছর ৪ সেপ্টম্বর পর্যন্ত গাছে আম রেখেছিলাম, আরো কিছুদিন রাখা যেত তারপরও গতবার ১০ হাজার ২০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করেছিলাম ১০ মণ আম। আমের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে বেশ কয়েক বছর আগে ৩০টি ডগা নিয়ে, নাচোলে বাগান গড়ে তুলেছেন একজন কৃষক। তার বাগানেও প্রায় ১৮০টি গাছ আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ হাবিবুল্লাহ বলেন, গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় দুটি বাগানের বিষয় জানতে পারি। এরপর গোমস্তাপুরের বাগানের গাছগুলো গত দুই বছর পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। ইলামতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এটি নাবি জাতের আম যা সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত গাছে রাখা যায়। এর গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম, মিষ্টতা বা টিএসএস শতকরা ২১-২২ ভাগ, পাকলে হালকা হলুদাভাব সবুজ রং ধারন করে ও সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আমরা এর আগে নাবি জাত হিসাবে গৌড়মতি মুক্তায়িত করেছিলাম। আমাদের সন্ধান পাওয়া এই গুটি আমটি গত বছর ও এ বছর পর্যবেক্ষণ করেছি, এর মিষ্টতা গৌড়মতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমটিকে আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের আকৃষ্ট করেছে।
তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ইলামিত্র অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি কৃষকদের প্রতি ইলামিত্রের ত্যাগ ও ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নাবি জাত হিসাবে আমটির নামকরণ ‘ইলামতি’ করার। নাবি জাত হিসাবে আমটির সম্ভাবনা সামনে এনে এটিকে সম্প্রসারণে নতুন জাত হিসাবে মুক্তায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নাবি জাত হিসাবে আমটি সম্ভাবনাময়।