সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪

গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত এলাকায় অতিদ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে -কৃষিমন্ত্রী

বারি হাইব্রিড জাতের টমেটো।

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত এলাকায় অতিদ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন ও টমেটো চাষীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিঁনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের সামাজিক মর্যাদা আছে। অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এখন কৃষি ও কৃষিখামার করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষও অনেকটা সেরকম। ভারতীয় টমেটো আমদানি হওয়ায় এখানকার কৃষকরা টমেটোর ভালো দাম পাচ্ছেন না- এমন অভিমতের প্রেক্ষিতে কৃষিমন্ত্রী ড.রাজ্জাক বলেন, ভারতীয় টমেটো যাতে না আসে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। তাহলে টমেটোর আশানুরূপ দাম পাবে কৃষকরা।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি আরো বলেন, ‘কৃষি কাজ করে আয় বাড়াতে হবে। আর এই আয় বাড়াতে হলে অসময়ের ফসল চাষাবাদ বেশি করতে হবে। ফলে পোকামাকরের আক্রমণ কম হবে। এ উপজেলায় ৬৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। আমার দাবি আগামি বছর জেলায় ৭০০ হেক্টরে জমিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষবাদ করা হোক। উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের কামারালী মাঠে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রী ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক এমপি।

তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে হবে। গার্মেন্টেসের মতো সব কৃষিপণ্য যাতে বেশি বেশি বিদেশে রপ্তানি করা যায় সেদিকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্যের ঘাটতি নেই, কোন অভাব নেই। এখন শুধু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এতে করে কৃষকদের আয় বাড়বে। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তৈরির জন্য বেশি বেশি সবজি চাষ করতে হবে। বেশি বেশি সবজি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবজি বিদেশেও রফতানি করতে হবে। কাঁচামাল যাতে না পঁচে যায় সেজন্য সরকার নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে। লবনাক্ত পানিতে যাতে ফসল উৎপাদন করার যায় তারও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। পিয়াজের বীজ ইতোমধ্যে সারা দেশে বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি বছরে পিয়াজের কোন ঘাটতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কৃষি বিষয়ক যে প্রকল্প ধরা হয় সেটা তিনি পাশ করে দেন। কৃষির সমস্যা গুলো অচিরেই সমাধান করবে সরকার।’

একই সাথে টমেটো ক্ষেত সংলগ্ন ওফাপুর বিলের লষ্কর খালটি আগামি অর্থবছরের মধ্যে খনন করার ঘোষনা দেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। খালটি দখল করে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করায় মাঠের পানি নিষ্কাশন হয় না। ওই এলাকার কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত টমেটো নির্বিঘ্নে বিক্রয় করতে পারেন সেজন্য সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শেড নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন কৃষিমন্ত্রী।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের হিসেবে, সাতক্ষীরায় এ বছর ৮৪ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। বারি হাইব্রিড-৪ ও বারি হাইব্রিড-৮ জাতের এ টমেটো চাষে যুক্ত আছেন ৫০০ কৃষক ও ১৫০০ শ্রমিক। গাছ থেকে ২-৩ বার টমেটো তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৬২-৭০ টন। আর প্রতি বিঘায় কৃষকের নীট লাভ হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদেরকে বীজ, চারা, বালাইনাশক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।  এসময় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মো: হুমায়ুন কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম ও বিএডিসির চেয়ারম্যান ড.অমিতাভ সরকার প্রমুখ। কৃষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আফসার সানা। যুগিখালী ইউনিয়নের ৩৬০জন টমেটো চাষী মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. বখতিয়ার আহম্মেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, বিএডিসির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, ফিরোজ আহম্মেদ, কলারোয়া পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ, সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর বিন সেলিম যাদু, কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক এমএ কালাম, যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসানসহ কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা। এছাড়াও স্থানীয় আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এবং উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম।

This post has already been read 3361 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …