নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রি ধান৭৫, একটি সম্ভাবনাময় স্বল্প–মেয়াদী এবং আগাম আমন ধানের জাত যা কাটার পর সারা দেশে বিভিন্ন প্রকার রবি শস্য যেমন– গম, মসুর, সরিষা, ভুট্টা এবং অন্যান্য শীতকালীন ফসলের চাষের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ইউএসএআইডি–এর অর্থায়নে পরিচালিত সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া (সিএসআইএসএ III) প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহযোগিতায় ঝিনাইদহ জেলার ফুলহরি গ্রামে কৃষক মো. লিয়াকত আলীর জমিতে এই মাঠপরীক্ষা বাস্তবায়ন করেছে।
ব্রির ট্রায়াল প্লটে ইতিমধ্যেই ধান কাটা শুরু করেছে। ব্রি কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মাহবুবুর রহমান দেওয়ান বলেন, মাঠ পরীক্ষার ফলাফলে আমরা দেখতে পেয়েছি, ২০ দিনের চারা ব্যবহার করে ১০৫ দিনেই ব্রি ধান৭৫ কাটা যায় এবং ফলন হেক্টরপ্রতি ৫ টনের অধিক হয়েছে। ২০ জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পর্যন্ত এই ধানের বীজতলা বপন করা হয়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন এবং এই কর্মসূচির প্রধান গবেষক বলেন, “যদিও ব্রি এই জাতের সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ২০ জুলাই থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ধান বপনের সুপারিশ করে থাকে, তবে জুনের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম দিকে বপন করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ধান কাটার পরেও বেশ ভাল ফলন পাওয়া গিয়েছে।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, এই জাতটি অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল দীর্ঘমেয়াদী জাতের তুলনায় আগাম উচ্চ ফলন দিতে পারে এবং আগাম পরিপক্কতার কারণে কৃষকরা সহজে এবং সময়মত মসুর ডাল, সরিষা, ভুট্টা বা অন্যান্য উচ্চ মূল্যের শীতকালীন ফসল চাষ করতে পারেন। ফলে, এটি জাতীয় শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
পরীক্ষামূলক চাষকারী কৃষক মো. লিয়াকত আলী বলেন, “আমরা এই জাতের আগাম ফসল এবং ফলন দেখে খুব খুশি। তিনি আরও বলেন, এটি ধানের পাশাপাশি খড়ের উচ্চ মূল্য পেতেও অনেক সাহায্য করবে।
ইরি সিনিয়র–স্পেশালিস্ট ড. শরীফ আহমেদ বলেন, “সিএসআইএসএ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা গত তিন বছর ধরে এই জাতের সম্প্রসারণ, বাজার উন্নয়ন, সংযোগ এবং ব্র্যান্ড সৃষ্টির জন্য কাজ করছি। এই অঞ্চলের কৃষকরা (যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর) ইতোমধ্যেই ব্যাপকভাবে এই জাতটি চাষাবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই জাতের ধানের চাল আকারে লম্বা ও চিকন। এছাড়াও, রান্নার সময় এবং পরে ধানটি থেকে হালকা ঘ্রাণ বের হয়। ধানটি লম্বা এবং চিকন হওয়ার কারণে, কৃষকরা এই জাতের ধান বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারছে। ফলে তারা এই জাতটি চাষ করতে আরো বেশি আগ্রহী।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের প্রকল্প থেকে আমরা স্থানীয় বীজ কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও কাজ করছি এবং কৃষকদের নেতৃত্ব দিচ্ছি যাতে এর বীজ স্থানীয় পর্যায়ে পাওয়া যায়। তিনটি অটো রাইস মিলের সাথেও আমাদের কাজ চলমান। আমনের ফসল কাটার পর তারা এই চালকে প্রিমিয়াম রাইস ব্রি ধান৭৫ নামে ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়েছে। আমরা আশা করছি নভেম্বরের শুরুতে, ভোক্তারা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই জাতের চাল কিনতে পারবে।”
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, “এই জাতের উচ্চ ফলনশীলতার সম্ভাবনার পাশাপাশি চাষের স্বল্প মেয়াদকাল কৃষকদের জন্য একটি নতুন জাত চাষের দুয়ার খুলে দেবে। এর ফলে কৃষকরা তাড়াতাড়ি ফসল কেটে বেশি মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী রবি শস্য সময়মত রোপণ করতে পারবেন। তিনি আশা করেন যে এই জাতটি সারা দেশে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষকদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে।”