নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে পোলট্রি, মৎস্য, ক্যাটল ফিড তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তবে ১৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত যে সব এলসি/টিটি সম্পন্ন হবে উক্ত পণ্যসমূহ ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখের মধ্যে রপ্তানি করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানিয়া ইসলাম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে (নম্বর ২৬.০০.০০০০.১০০.৯৯.০০১.১৭-৩৫৬) বিষয়টিকে অতীব জরুরি উল্লেখ করে বলা হয়, .মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় (পত্র নং-৩৩.০০.০০০০.১১৮.১৬.৪৮১.১৭-৪২৬ তারিখ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১) এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর [পত্র নং- ৩৩.০১.০০০০.১১১.২২.০০৯.১৭ (২)-১৭৩৪ তারিখ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২] এর সূত্রোক্ত পত্রদ্বয়ের মাধ্যমে জানা যায় সয়াবিন মিল রপ্তানি অব্যাহত থাকলে এর প্রভাবে ডেইরী ও পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে ডেইরী ও পোলট্রি খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
এমতাবস্থায় ডেইরী ও পোলট্রি সেক্টরের স্বার্থ রক্ষার্থে ১৪ অক্টোবর হতে পোলট্রি ও ক্যাটল ফিড তৈরির অন্যতম উপকরণ “সয়াবিন মিল” রপ্তানি বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) –এর সভাপতি মসিউর রহমান এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, দেরীতে হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত ও ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে শিল্পের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের এসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। কারণ, প্রথম থেকেই আমাদের পোলট্রি সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামতকে উপেক্ষা করে সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর ফলে ফিডের দাম কমার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে বিপিআইসিসি সভাপতি বলেন, আমরা আশা করছি এতে করে ফিডের দাম কমানো সহনীয় হবে, তবে কিছুটা সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির অন্যান্য কাঁচামালের দাম আগামী এক দু মাসের মধ্যেই কমবে বলে আশা করি, মোদ্দা কথা কাঁচামালের দাম কমলে আমরা অবশ্যই ফিডের দাম কমিয়ে সমন্বয় করবো। কারণ, ব্যবসার পাশাপাশি খামারি ও ভোক্তার স্বার্থ দেখাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
উল্লেখ্য, ফিড তৈরির অন্যতম উপকারণ সয়াবিন মিলের ক্রাইসিসের মুহূর্তে ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। পোলট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ফিড তৈরি অন্যতম উক্ত কাঁচামালটি দেশের বাজারেই যখন সরবরাহ ঘাটতি ও দামের উর্ধ্বমুখী ঠিক তখনই ভারতে সেটি রপ্তানি শুরু হয়। ব্যাপক সমালোচনা ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এর দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উক্ত পণ্যটির ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট ইস্যু বন্ধ করার মাধ্যমে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ হয়। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে শক্তভাবে টিকতে পারেনি মন্ত্রণালয়। মাত্র ৪ দিন পরে (গত ৯ সেপ্টেম্বর) নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সয়াবিন মিল পুনরায় রপ্তানির অফিস আদেশ জারি কৃষি মন্ত্রণালয়। এর ফলে সমগ্র সেক্টরে নেমে আসে অস্থিরতা ও ক্ষোভ।
ওইদিন (৯ সেপ্টেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং) এর পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে (স্মারক নং–১২.০১.০০০০.৫০০.৯৯.১১৬.১৭/৪৭৬৩) জানানো হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উল্লেখিত পণ্য রপ্তানিতে কোন বাধা না থাকায় পুনরায় রপ্তানি কার্যক্রম যথাযথভাবে শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়।