ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ২৯ পোল্ডার ১৯৬৭/৬৮ সালে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসব এলাকার লোকজন এখন চরম নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলে দেখা দেয় বেড়িবাধের ভাঙ্গণ। প্রায় ৫০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ২৯ নং পোল্ডার। এখানে রয়েছে প্রায় ৫৫টি গ্রাম। রয়েছে হাজার হাজার লোকের বসবাস। এই পোল্ডারে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে নদী ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে।
বেড়িবাঁধ থাকায় শতশত পরিবার তাদের পরিজন নিয়ে সুরক্ষিত আছে। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে ও বিভিন্ন দুর্যোগ এলে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ভদ্রানদীর গ্রাসে নদী ভাঙ্গনে বিলুপ্ত হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের জালিয়াখালি গ্রাম। দেড় কিলোমিটার জুড়ে ছিল এই গ্রামটি। ১২শ’ লোকজনের বসবাস ছিল এখানে। শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়িসহ প্রায় ৫শ’ বিঘা সম্পত্তি ইতোমধ্যে ভদ্রানদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এক কথায় বলা যায়, মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে জালিয়াখালী ও সেজবুনিয়া গ্রামটি দুটি। পাশেই অবস্থিত চাঁদঘর গ্রাম। প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই গ্রামটির অবস্থাও এমনই। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙ্গন রোধের নামে নামমাত্র কাজ করে থাকেন। অন্যদিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বারোআড়িয়া বাজার ও গ্রামটি নদীগর্ভে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বারোআড়িয়া গ্রামের ৭০ শতাংশ পরিবার নদীগর্ভে তাদের জমি জায়গা সহায়-সম্বল হারিয়েছে।
বতর্মান বারোআড়িয়া এলাকায় জাইকার অর্থায়নে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে ৭শ’ মিটারের জিও ব্যাগের কাজ চলছে। এখানেও চলছে চরম অনিয়ম। স্থায়ী কোনো টেকসই (ব্লক) ভাঙ্গনরোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখনো। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় এই বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিভিন্ন সময় একাধিক বেসরকারি এনজিও দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছে। ২৯ নম্বর পোল্ডারের ১৩টি স্লুইসগেট ও একটি আউটলেট রয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য একমাত্র মাধ্যম এই সব স্লুইসগেট গুলো।
বতর্মান অধিকাংশই স্লুইস গেটের অবস্থা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বেশকিছু স্লুইস গেট। উপজেলার বকুলতলা, তেলিখালী, কাঞ্চন নগর সহ বেশকিছু সুইস গেটের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যেকোনো সময় নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলে এই স্লুইস গেট গুলো ভেঙে যেতে পারে। সুইচগেট ভেঙে গেলে পানিবন্দি হয়ে পড়বে হাজার হাজার পরিবার। ফসলি জমি মাছের ঘের সহ কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অচিরেই এই ঝুঁকিপূর্ণ স্লুইস গেট গুলো মেরামত করা দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
পানিউন্নয়ন বোর্ডের অধিনে চটচটিয়া পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব এলাকায় নদীভাঙন রোধের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ এর প্রয়োজন। না হলে বাকি গ্রামগুলো দিন দিন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, নদী ভাঙ্গন আমাদের নিত্যদিনের সাথী। এই ভদ্র নদীর কবলে জালিয়াখালী, চাঁদগড় সহ বেশকিছু গ্রাম এখন নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে।