বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

বিএলআরআই-এ মহাপরিচালক এর বিদায় সংবর্ধনা ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত

সাভার (ঢাকা) : রবিবার (২১ নভেম্বর)বিএলআরআই-এর বিদায়ী মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল জলিল -এর বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই-এর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আজহারুল আমিন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই-এর বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ, প্রকল্প পরিচালকগণ, শাখা প্রধানগণসহ সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।

বিকাল ৩ টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিদায়ী অনুষ্ঠান। এরপর একে একে বিদায়ী মহাপরিচালকের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী, কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীবৃন্দ। এ সময় বক্তারা তাঁর কর্মকুশলতা, আন্তরিকতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন দক্ষতা, উদ্ভাবনী কৃতিত্ব, ক্ষমাশীলতাসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা নানাভাবে তুলে ধরেন। একই সাথে বক্তারা বিদায়ী মহাপরিচালক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শুভকামনা ব্যক্ত করেন এবং তাঁদের সুস্থ্য ও দীর্ঘ কর্মজীবন কামনা করেন। একই সাথে অনুষ্ঠানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শুদ্ধাচার পুরষ্কার বিজয়ীদের হাতে তাঁদের পুরষ্কারের চেক তুলে দেন বিদায়ী মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল জলিল।

বিদায়ী মহাপরিচালকের সাথে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের এই আয়োজনের বিদায়ী অতিথি, ইনস্টিটিউটের বিদায়ী মহাপরিচালক একজন সদালাপী মানুষ। তাঁর সাথে ইনস্টিটিউটের সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল তা সত্যি বিরল। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন বন্ধু ও অভিভাবক। কখনো কোন কারণে তিনি বিরক্ত হতেন না, যেকোন সময়ে যেকোন প্রয়োজনে তাঁর সহযোগিতা পাওয়া যেতো। এসময় তিনি আরও বলেন, আজকের এই আয়োজন বিদায়ের নয়, কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কখনো ভাবিনি আজকের এই অবস্থানে আসতে পারবো। বিদায়ী মহাপরিচালকের হাত ধরেই আমার বিএলআরআই-এ প্রবেশ। এজন্য আমি বর্তমান মহাপরিচালকের প্রতি কৃতজ্ঞ।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত পরিচালক  মো. আজহারুল আমিন বলেন, বিদায়ী মহাপরিচালক এমন একজন মানুষ যিনি আন্তরিকতা, সহযোগিতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নিয়ে কাজ করে গেছেন। তাঁর সহযোগিতামূলক মনোভাবের কাছে তিনি সকলের কাছেই ছিলেন সমাদৃত। সকল সময়েই তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে মিল ছিলো। তিনি একই সাথে একজন যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করে দিয়ে গেছেন এবং তাঁর হাতেই কর্মভার অর্পণ করে গেলেন। শেষ ভালো, যার সব ভালো- এই আপ্তবাক্য প্রমাণ করে তিনি হাসিমুখে আজ আমাদের মধ্যে থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে নুবনিযুক্ত মহাপরিচালক মহোদয়কে ফুল ও উত্তরীয় প্রদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেন বিদায়ী মহাপরিচালক মহোদয়। একই সাথে বিদায়ী মহাপরিচালক মহোদয়কে ফুল ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন নবনিযুক্ত মহাপরিচালক। একই সাথে তিনি বিদায়ী মহাপরিচালকের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক এবং বিদায়ী উপহার তুলে দেন। এসময় বিদায়ী মহাপরিচালক মহোদয়কে বিএলআরআই কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং বিএলআরআই অফিসার্স ক্লাবের পক্ষ থেকেও বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানো হয়।

বিদায়ী বক্তব্যে ড. মো. আবদুল জলিল বলেন, “বিএলআরআই জীবনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এই ইনস্টিটিউটকে নিজের পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি। কখনো নিজের কথা ভেবে কোন কাজ করিনি। সব সময় বিএলআরআই-এর জন্য কাজ করতে চেয়েছি, ইনস্টিটিউটটের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক সচিব  মো. রওনক মাহমুদ মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিদায়ী সচিব মহোদয়ের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি বিএলআরআই-এর প্রচারণা বাড়াতে, বিএলআরআই-কে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।

ইনস্টিটিউটে নতুন যোগদান করা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের প্রতি উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কাজের সাথে সাথে কাজের মধ্যে আনন্দও থাকতে হবে। হাসতে না পারলে, মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকতে না পারলে বিজ্ঞানীরা কাজ করবে কিভাবে? কে ভালো করলো তা চিন্তা না করে, তাঁর পিছনে না লেগে, নিজে কি করলাম তা ভাবতে হবে। নিজের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।

বক্তব্য প্রদানের এক পর্যায়ে বিদায়ী মহাপরিচালক আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, বিএলআরআই-এর কোন সাবেক মহাপরিচালকই সুস্থ্য-স্বাভাবিকভাবে তাঁদের বিদায়ী বক্তব্য শেষ করতে পারেননি, আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় তারা ইনস্টিটিউটকে কতটা ভালোবেসেছেন। ইনস্টিটিউটকে ধারণ করে আমি চেষ্টা করেছি বিএলআরআই-এর বিভিন্ন আয়োজনে সাবেকদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসতে, তাদেরকে ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে।

কর্মজীবনের শুরু থেকে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং ভবিষ্যতে যেনো দেশের জন্য আরও কিছু করতে পারেন তার জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। বিদায় বেহাগ ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত অনুষ্ঠানস্থলে।

This post has already been read 3211 times!

Check Also

ময়মনসিংহে তারুণ্যের সভায় মাদকমুক্ত জীবনের শপথ

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা: উন্নত সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অবদান রাখতে মাদকমুক্ত জীবনের শপথ নিয়েছে ময়মনসিংহের …