রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

জাতিসংঘের বীজ সূচকে শীর্ষ দশে লাল তীর সীডস

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের বীজ সূচকে শীর্ষ দশে অবস্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশী বীজ কোম্পানি। ওয়ার্ল্ড বেঞ্চমার্ক এলায়েঞ্চ ও ইউনাইডেট নেশন ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত এ সূচকে বাংলাদেশের লাল তীর সীডস লিমিটেড শীর্ষ সাতে অবস্থান করেছে। আঞ্চলিকভাবে তৈরি তালিকায় শীর্ষ ৩১ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের দুটি কোম্পানি রয়েছে। দক্ষিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মত সপ্তম অবস্থানে এসেছে লাল তীর সীডস লিমিটেড।

২০১৯ সালের পর চলতি ২০২১ সালে একসেস টু সীড ইনডেক্স প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াল্ড বেঞ্চমার্ক এলায়েঞ্চ ও ইউনাইডেট নেশন ফাউন্ডেশন। প্রতিবেদন তৈরিতে ছয়টি সূচকের ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সূচকের মধ্যে সক্ষমতা তৈরি, মার্কেটিং এবং সেলস, বীজ উত্পাদন, গবেষনা ও উন্নয়ন, জেনেটিক রিসোর্স এ্যান্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট, সুশাসন ও কৌশল। এ ছয়টি সূচকের ওপর ১০০ নম্বর করা হয়েছে। সেখানে লালতীর সীডস পেয়েছে ৫৯ দশমিক ২ নম্বর। সেখানে লাল তীর সবচেয়ে ভালো করেছে বীজ উত্পাদনে। আঞ্চলিকভাবে কোম্পানিটির সার্বিক অবস্থান সপ্তম হলেও বীজ উত্পাদনে লাল তীরের অবস্থান তৃতীয়। মার্কেটিং এ্যান্ড সেলস এ চতুর্থ অবস্থানে। গবেষনা ও উন্নয়ন এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংএ ৬ষ্ট অবস্থানে রয়েছে লাল তীর। প্রতিষ্ঠানটির জেনেটিক রিসোর্স এ্যান্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট, সুশাসন ও কৌশলে একটু পিছিয়ে থাকায় সার্বিক অবস্থান সপ্তমে এসেছে। তবে সামনের দিনে এ দুটি বিষয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব হলে কোম্পানিটি আঞ্চলিকভাবে শীর্ষ পাচে অবস্থান করতে পারবে।

এ বিষয়ে লাল তীর সীডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, বীজ সূচকে বাংলাদেশী কোম্পানি হিসেবে লাল তীরের এই অবস্থান অবশ্যই গৌরবের। গত কয়েক দশক ধরে দেশের বীজ শিল্পের উন্নয়নে যে অবদান লালতীর রেখেছে তার স্বীকৃতি এটা। বৈশ্বিকভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা লাল তীরের জন্য কৃষকের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে ভালো বীজের জন্য উদ্ভাবন, গবেষনা ও সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে লাল তীর। দেশে সবজি আবাদে শীর্ষস্থানীয় বীজ সরবরাহকারী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে। শীত ও গ্রীস্মকালের সবজি এখন আর কোন স্বপ্ন নয়। ভালো বীজের কারনেই কৃষক সবজি আবাদ করে লাভবান হচ্ছে। এই শিল্পে পরবর্তীতে আরো অনান্য বেসরকারী খাত এগিয়ে এসেছে। এখন বীজের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে বেসরকারি কাজ করছেন। বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসতে সরকার নীতি ও কাঠামগত সুবিধা বাড়াচ্ছে। সামনের দিনে এই সূচকে বাংলাদেশী আরো কোম্পানি আসতে পারে।

বীজ সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাল্টিমোড গ্রুপের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠান লালতীর সীডস লিমিটেড ১৯৯৫ সালে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার পূর্বের নাম ছিলো ইষ্ট-ওয়েস্ট সীড বাংলাদেশ লিমিটেড। এটি মূলত ইষ্ট-ওয়েস্ট সীড এর সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৭ সালে লাল তীর সীড নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত সবজিবীজের প্রবক্তা হিসেবে দেশে লালতীতের সুনাম রয়েছে। ২০১০ সাল হতে ধান বীজের উত্পাদন ও বিপনন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

লাল তীর সীড  সম্পর্কে

বাংলাদেশে সবজির চাহিদা পূরণ এবং খাদ্যের পুষ্টিমান উন্নত করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে লাল তীর সীড লিঃ তার যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে লাল তীর সী লিঃ প্রথম গবেষণাভিত্তিক বীজ প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরস্থ বাসনে প্রায় ৩০ একর জমিতে ৩০ জন বৈজ্ঞানিক গবেষকের একান্তিক প্রচেষ্টায় বিগত ২৫ বছরে লাল তীর ১৮২টি সবজি জাত, ১২টি ধানের জাত এবং অন্যান্য ফসলের হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। একই স্থানে বীজের গুণগত মাণ এবং সংরক্ষণ এবং মোড়কজাতকরণে তাপ আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত ১৫টি সংরক্ষনাগার নির্মাণ করেছে।

কৃষকের মাঝে উন্নত বীজ সরবরাহের লক্ষ্যে লাল তীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে ১২টি ভিন্ন এলাকাতে বীজ উৎপাদন করে থাকে । এলাকাগুলো হলোঃ নীলফামারি, জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, মেহেরপুর, কুড়িথাম, ভালুকা, পাবনা, মধুপুর, রামগড়। এছাড়া ময়মনসিংহ, পাবনা এবং বগুড়াতে ধান বীজ উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বীজ উৎপাদন পর্যবেক্ষণ এবং পরিচালনার জন্য এখানে প্রায় ৪০ জন কৃষিবিদ নিয়োজিত আছে।

বীজের শুদ্ধতা, সঠিকমান, অন্কুরোদগম এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার জন্য গাজীপুরে দুইটি আধুনিক গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। লাল তীর উৎপাদিত এবং উদ্ভাবিত বীজ সারাদেশে সরবরাহ, বিক্রয় এবং পরিবেশনের জন্য প্রায় ১,৫০০ ডিলার এবং ১৮,০০০ খুচরা বিক্রেতা নিয়োজিত আছেন।

লাল তীর কৃষকের মাঝে বীজ বিক্রয় বাদে বিক্রয়োত্তর সেবা অর্থাৎ মাঠ পর্যবেক্ষণ ফসলের রোগবালাই ও অন্যান্য সমস্যায় করণীয় এবং প্রশিক্ষণ উপদেশ প্রদান করে থাকে। দেশের বাজারের বাইরেও লাল তীর সুনামের সাথে বহিঃবিশ্বে বীজ রপ্তানী করে থাকে। রপ্তানীকৃত উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলোঃ ওমান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং ভিয়েতনাম । এছাড়াও ইতালি, ইউএসএ এবং কানাডাতেও লাল তীর বীজ রপ্তানী করছে।

২৫ বছরের পথ চলায় লাল তীরের সাথে বিভিন্ন সময় সঙ্গী হয়েছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো : IRRI, AVRDC (World Vegetable Centre), ICRISAT, CIMMYT, BRRI, BARI, BINA, BJRI, BWMRI, BAEC, Cornell University-USA, New Mexico University-USA, University of Illinois-USA, Gothenburg University- Sweden, Wageningen University and Research-Netherlands, BAU, BSMRAU, Sher-e-Bangla Agricultural University, Khulna University, NSTU, PSTU, Hazi Danesh University এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যেমন- USAID, CIDA, SIDA, NSO, FAO, World Vision, Netherlands Enterprise Agency এর সাথেও যৌথভাবে কাজে করেছে লাল তীর ।

লাল তীর বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পেক্ষাপটে আগামীর খাদ্যের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অধিক লবনাক্ততা এবং খরা সহিষ্কু জাত উদ্ভাবন এবং বাজারজাত করছে। লাল তীর লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাসী একটি কোম্পানী যার প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং ভালো বীজ সরবরাহ করে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে লাল তীর।

This post has already been read 3412 times!

Check Also

অ্যামচেম এর সাথে বিডার সংলাপ

আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশ আজ ( সোমবার ,২১ অক্টোবর) রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে …