নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চায় গ্রোটেক গ্রুপ। এজন্য দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেশীয় পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে আমরা আরো বেশি অবদান রাখতে চাই।
দেশের মৎস্য ও কৃষি সেক্টরের স্বনামধন্য কোম্পানি গ্রোটেক গ্রুপের ১৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান খোন্দকার ফরহাদ হোসেন। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরাস্থ জমজম টাওয়ারে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় গ্রোটেক গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর টিএসও মো. জিয়াউর রহমান কর্তৃক পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত এবং গ্রোটেক এনিমেল হেলথ-এর সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার তরুন কুমার দাস কর্তৃক পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
গবেষণা কাজে কোম্পানির আর অ্যান্ড ডি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার অত্যন্ত উৎসাহী উল্লেখ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, তাঁর কারণে আমরা নিজেরাও গবেষণার ব্যাপারে খুব উৎসাহ বোধ করি। আমরা চাই যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক আমাদের গ্রোটেক গ্রুপ। সেজন্য অ্যাকোয়াকালচারের পাশাপাশি গ্রুপের অন্যান্য উইংগুলোকেও পর্যায়ক্রমে আরঅ্যান্ডডি ল্যাবরেটরী স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার কাজ চলছে।
টীম ওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রোটেক পরিবার এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে খোন্দকার ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানি গ্রোটেক গ্রপের স্লোগানই হলো “Grow Together” যার অর্থ আমরা সকলেই একসাথে এগিয়ে যেতে চাই। গ্রোটেক পরিবারের সকল সদস্যদের সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা একসাথে এগিয়ে যেতে চাই।
সারাদেশ থেকে আগত বিক্রয় প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার কাজে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে খোন্দকার ফরহাদ হোসেন বলেন, যদিও ২০২১ সনের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমাদের কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমান কার্যক্রম যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে করে ২০২২ সনের আগেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোম্পানির কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
খোন্দকার ফরহাদ বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য ঘোষিত ‘এডুকেশন এইড পলিসি’ যেটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম সহায়তার উদ্দেশ্যে তৈরির কথা সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি; তবে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সন্তানদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হবে। এছাড়াও গ্রাচুয়েটির ব্যাপারেও আমাদের নীতিমালার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে যা যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত হবে বলে আমার বিশ্বাস এবং দ্রুতই এটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউল করিম ভূঁইয়া। তিনি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। বিগত বছরগুলোর মতো কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততা বজায় রেখে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও ২০২২ সনের সেলস্ টার্গেট ও বাজেট উপস্থাপনা করেন জনাব ভূঁইয়া।
বাজেট পেশ এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আতাউল করিম ভূঁইয়া বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরে (২০২১ সন) আমাদের বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আশা করি, এগুলোকে মোকাবেলা করে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। আমরা ইতিবাচক চিন্তা ও পদক্ষেপ নিয়ে পথ চলতে চাই। কারো অমঙ্গল নয়, আমরা সবার এবং দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবো।
তিনি ফিসটেক পরিবারের সহযোগি প্রতিষ্ঠান ফিসটেক গলদা হ্যাচারি, ফিসটেক বাগদা হ্যাচারি, ফিসটেক তেলাপিয়া হ্যাচারি, গ্রোটেক এগ্রো, গ্রোটেক এনিমেল হেলথ প্রত্যেকটি কোম্পানির স্বতন্ত্রভাবে বিগত বছরের অর্জন ও ২০২২ সনের সেলস বাজেট উপস্থাপন করেন।
ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড-এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার বলেন, যে কোন কোম্পানি বা পণ্যের ভুল ত্রুটি বুঝতে এবং সঠিত পথে চলতে হলে আরঅ্যান্ডডি’র বিকল্প নেই। অতিমারি পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরের ন্যায় এ বছর আমরা ’নলেজ ডে’ এর আয়োজন করতে পারিনি। কিন্তু এরপরও আমাদের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ফিল্ড ট্রায়াল করে এমন অনেক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি যা কোন সায়েন্টিক জার্নালে প্রকাশ করার উপযুক্ত। অ্যাকোয়া কালচারের পাশাপাশি এসব কার্যক্রমগুলো আমাদের কোম্পানির প্রতিটি উইংয়ের জন্য করতে চাই। তিনি জানান, কক্সবাজারে অবস্থিত আরঅ্যান্ডডি সেন্টারকে আমরা নতুনভাবে গোছাচ্ছি। প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক নিয়ে আমাদের কাজ চলছে; সামনে ভিটামিন, এনজাইম নিয়েও আমরা কাজ করবো।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রাকৃতিক হরমোন পিজি (Pituitary Gland) -এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন মোহাম্মদ তারেক সরকার।
অনুষ্ঠানে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাফিউল হাসান চৌধুরী কোম্পানির বিগত বছরের কর্মকাণ্ড, সেলস পলিসি এবং বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত বিপণন কর্মকর্তাদের বিপণন বিষয়ে উৎসাহের মাধ্যমে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এছাড়াও তিনি গত বছরের কর্মকর্তারা কে কোন কর্মকান্ডে জড়িত এবং তাদের সাফল্য উপস্থাপন করে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড-এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার, ব্যবস্থাপক মো. সোহেল মিয়া এবং এক্সিকিউটিভ মো. আরিফুল ইসলাম দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষকৃত মাছের পুকুরের ডেমো ফলাফল প্রদর্শন করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সাফল্য ও করণীয় উল্লেখ করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে গ্রুপ ডিসকাশন করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়াও নতুন বছরের ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন, ইনসেনটিভ ছাড়াও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী রাখা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মাঝে বার্ষিক নগদ প্রণোদনা ও শীতের প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করা হয় আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রোটেক এনিমেল হেলথ-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান, গ্রোটেক এগ্রো’র অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার এস.এম. আবু সায়েম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটিতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন কোম্পানীর এইচআর বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার নরোত্তম চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য, গ্রোটেক গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড বাংলাদেশ মৎস্য সেক্টরে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং পাবদা ও গোলসা মাছের ফিড দেশে তারাই প্রথম বাজারজাত করে। তাদের রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দীপপুঞ্জ থেকে নিয়ে আসা এসপিআর (স্পেসেফিক প্যাথোজেন রেজিস্ট্যান্স) তেলাপিয়া পোনার হ্যাচারি, মাছ ও চিংড়ির পুকুরের সমস্যা নিয়ে নিঁখুত গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য খুলনায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম আরটি-পিসিআর (রিয়াল-টাইমপলিমারেজ চেইনরিয়েকশান) ভিত্তিক মলিকু্লার ল্যাবরেটরী। এছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠান মৎস্য অধিদপ্তরের পরে বেসরকারি একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিশারিজ গ্রাজুয়েট কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটিতে।