বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ‘বিপ্লব’ চাষ পদ্ধতি

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ‘বিপ্লব’ একটি উচ্চ ফলনশীল, উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টি এবং রোগ সহনশীল পেঁয়াজের জাত। এটি এক কন্দ বিশিষ্ট পেঁয়াজ এবং বোল্টিং- এর পরিমান খুবই কম। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৯০%, বাল্বের ওজন: ৭০-১২০ গ্রাম এবং পেয়াজের রং লালচে তামাটে বর্ণের। চারা রোপনের ১০০-১১০তম দিনে ফসল সংগ্রহ করতে হয় এবং ফলন: ৩০-৩২ হেক্টরপ্রতি মে:টন।

চাষ পদ্ধতি

মাটি: সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিতে পেঁয়াজ ভালো হয়।

বীজ হার: ৭.৫-৮ কেজি/হেক্টর

বপন সময়: এপ্রিল-সেপ্টেম্বর

বীজতলা তৈরি:

জায়গা নির্বাচন: বীজতলার জন্য উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে। বেডের উচ্চতা ৫০ সে:মি: হলে ভালো হয়।

নিষ্কাশন ব্যবস্থা: পানি নিষ্কাশনের জন্য ২ বেডের মাঝে ৫০ সে:মি: নালা রাখতে হবে।

কীটনাশক ব্যবহার: বীজতলা তৈরির সময় কার্বোফুরান ব্যবহার করতে হবে।

সোলারাইজেশন: বীজ বপনের ৩-৫ দিন পূর্বে বীজতলার মাটি কালো পলিথিন শীট দিয়ে ঢেকে সোলারাইজেশন করে নিলে ভালো হয়।

বেড কভার: অত্যাধিক রোদ ও অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেডের উপর পলিথিনের কভার ব্যবহার করতে হবে। আলো-বাতাসের জন্য প্রতি দিন সকালে ২-৩ ঘন্টা কভার সরিয়ে ফেলতে হবে।

মূল জমি তৈরি:

জমি তৈরি: পেঁয়াজ মূল জাতীয় ফসল বিধায় জমি ৪-৫ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

বেড সাইজ: জমিতে ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে এবং ২ বেডের মাঝে ৫০ সেমি নালা তৈরি করতে হবে।

চারা রোপন: বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর চারা মূল জমিতে রোপন করতে হবে।

রোপন দূরত্ব: সারি-সারি – ১৫ সে:মি: ও চারা-চারা – ১০ সে:মি:

ফসলের পরিচর্যা

সারের পরিমান প্রয়োগ পদ্ধতি (প্রতি শতক জমির জন্য):

ক্রমিক সারের নাম জমি তৈরির সময় ১ম উপরি প্রয়োগ (চারা রোপনের ২৫-৩০ দিন পর) ২য় উপরি প্রয়োগ (চারা রোপনের ৫০-৫৫ দিন পর)
কম্পোস্ট সার ২০-২৫ কেজি
ইউরিয়া ২৫০-৩০০ গ্রাম ২০০-২৫০ গ্রাম ২০০-২৫০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০-৮০০ গ্রাম
এমওপি ২৫০-৩০০ গ্রাম ২০০-২৫০ গ্রাম ২০০-২৫০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০-৫০০ গ্রাম
দস্তা ৪০-৫০ গ্রাম
বোরন ৪০-৫০ গ্রাম

রোগের প্রতিকার: অ্যানথ্রাকনোজ রোগের জন্য ২৫-৩০ দিন বয়সী গাছে এন্ট্রাকল বা অন্য কোন উপযোগী ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। পার্পল ব্লচ বা বেগুনী দাগ রোগের জন্য ৪০-৪৫ দিন বয়সী গাছে রোভরাল বা অন্য কোন উপযোগী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন মত অন্যান্য রোগ ও পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।

আগাছা দমন: ৬০-৭০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। অন্যথায়, বাল্ব গঠন দেরিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ: প্রয়োজন অনুযায়ী চারা রোপনের ৬০-৭০ দিন পর্যন্ত সেচ দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ সংরক্ষণ: পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ক হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায় এবং গাছ হেলে পড়ে। বিপ্লব পেঁয়াজের চারা থেকে কন্দের পরিপক্কতা হওয়া পর্যন্ত ১০০-১০০ দিন দরকার হয়। পাতা ও শিকড় কেটে শীতল ও ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন ফসল বিধায় উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ ২-৩ দিন এমনভাবে রেখে শুকাতে হবে , যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের রেক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক বা বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হবে।

This post has already been read 5994 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …