এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ‘বিপ্লব’ একটি উচ্চ ফলনশীল, উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টি এবং রোগ সহনশীল পেঁয়াজের জাত। এটি এক কন্দ বিশিষ্ট পেঁয়াজ এবং বোল্টিং- এর পরিমান খুবই কম। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৯০%, বাল্বের ওজন: ৭০-১২০ গ্রাম এবং পেয়াজের রং লালচে তামাটে বর্ণের। চারা রোপনের ১০০-১১০তম দিনে ফসল সংগ্রহ করতে হয় এবং ফলন: ৩০-৩২ হেক্টরপ্রতি মে:টন।
চাষ পদ্ধতি
মাটি: সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিতে পেঁয়াজ ভালো হয়।
বীজ হার: ৭.৫-৮ কেজি/হেক্টর
বপন সময়: এপ্রিল-সেপ্টেম্বর
বীজতলা তৈরি:
জায়গা নির্বাচন: বীজতলার জন্য উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে। বেডের উচ্চতা ৫০ সে:মি: হলে ভালো হয়।
নিষ্কাশন ব্যবস্থা: পানি নিষ্কাশনের জন্য ২ বেডের মাঝে ৫০ সে:মি: নালা রাখতে হবে।
কীটনাশক ব্যবহার: বীজতলা তৈরির সময় কার্বোফুরান ব্যবহার করতে হবে।
সোলারাইজেশন: বীজ বপনের ৩-৫ দিন পূর্বে বীজতলার মাটি কালো পলিথিন শীট দিয়ে ঢেকে সোলারাইজেশন করে নিলে ভালো হয়।
বেড কভার: অত্যাধিক রোদ ও অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেডের উপর পলিথিনের কভার ব্যবহার করতে হবে। আলো-বাতাসের জন্য প্রতি দিন সকালে ২-৩ ঘন্টা কভার সরিয়ে ফেলতে হবে।
মূল জমি তৈরি:
জমি তৈরি: পেঁয়াজ মূল জাতীয় ফসল বিধায় জমি ৪-৫ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বেড সাইজ: জমিতে ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে এবং ২ বেডের মাঝে ৫০ সেমি নালা তৈরি করতে হবে।
চারা রোপন: বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর চারা মূল জমিতে রোপন করতে হবে।
রোপন দূরত্ব: সারি-সারি – ১৫ সে:মি: ও চারা-চারা – ১০ সে:মি:
ফসলের পরিচর্যা
সারের পরিমান ও প্রয়োগ পদ্ধতি (প্রতি শতক জমির জন্য):
ক্রমিক | সারের নাম | জমি তৈরির সময় | ১ম উপরি প্রয়োগ (চারা রোপনের ২৫-৩০ দিন পর) | ২য় উপরি প্রয়োগ (চারা রোপনের ৫০-৫৫ দিন পর) |
১ | কম্পোস্ট সার | ২০-২৫ কেজি | – | – |
২ | ইউরিয়া | ২৫০-৩০০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম |
৩ | টিএসপি | ৭০০-৮০০ গ্রাম | – | – |
৪ | এমওপি | ২৫০-৩০০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম |
৫ | জিপসাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম | – | – |
৬ | দস্তা | ৪০-৫০ গ্রাম | – | – |
৭ | বোরন | ৪০-৫০ গ্রাম | – | – |
রোগের প্রতিকার: অ্যানথ্রাকনোজ রোগের জন্য ২৫-৩০ দিন বয়সী গাছে এন্ট্রাকল বা অন্য কোন উপযোগী ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। পার্পল ব্লচ বা বেগুনী দাগ রোগের জন্য ৪০-৪৫ দিন বয়সী গাছে রোভরাল বা অন্য কোন উপযোগী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন মত অন্যান্য রোগ ও পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
আগাছা দমন: ৬০-৭০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। অন্যথায়, বাল্ব গঠন দেরিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ: প্রয়োজন অনুযায়ী চারা রোপনের ৬০-৭০ দিন পর্যন্ত সেচ দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ক হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায় এবং গাছ হেলে পড়ে। বিপ্লব পেঁয়াজের চারা থেকে কন্দের পরিপক্কতা হওয়া পর্যন্ত ১০০-১০০ দিন দরকার হয়। পাতা ও শিকড় কেটে শীতল ও ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন ফসল বিধায় উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ ২-৩ দিন এমনভাবে রেখে শুকাতে হবে , যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের রেক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক বা বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হবে।