Saturday , April 26 2025

সম্ভাবনাময় ফসল একাঙ্গী এখন যাচ্ছে বিশ্ববাজারে

আসাদুল্লাহ (পাবনা) : একাঙ্গী হলো চমৎকার একটা ভেষজ উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম হলো Kaempferia galanga. মেহেরপুরের সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে একাঙ্গী ফসল। কৃষকের উৎপাদিত এ ফসলটি ইতোমধ্যে চীন, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

একাঙ্গী দেখতে অনেকটা আদার মতো। শুকনো বা কাচা একাঙ্গী রান্নায় মসলা হিসবে ব্যবহার করা হয়। এটি রান্নায় সুগন্ধ যোগ করে  ভিন্ন স্বাদ আনে। মাছ, মাংস, রোস্ট, রেজালা, বিরিয়ানি খাবারে একাঙ্গী ব্যবহার করা হয়। এর ফুলও অনেক জায়গায় খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। থাই এবং চাইনিজ রান্নাতে এই মসলা ব্যবহারের ব্যাপকতা রয়েছে। এর সৌরভের জন্য মাছ শিকারে গ্রামে-গঞ্জে এটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর ফুল থেকে সুগন্ধি তেল এবং রং উৎপাদন হয় কাঁচা একাঙ্গী হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও কাজে লাগে। এছাড়াও এর ঔষধি গুণাগুনও অনেক বেশি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক, কৃষিবিদ স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আম, পেয়ারা ও মাল্টার বাগানে সাথী ফসল হিসেবে একাঙ্গী চাষ করে কৃষক কয়েক বছরের জন্য বাড়তি সুবিধাও নিতে পারেন। লাভজনক এ ফসলের আবাদ বৃদ্ধিতে আমরা জেলার কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করছি। এছাড়া আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা একাঙ্গী চাষিদের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত উঁচু ভিটার জমিতে একাঙ্গী চাষ ভালো হয়। সারা বছর জমি রসালো থাকবে। তবে জমিতে পানি জমে গেলে গাছ মারা যায়। একাঙ্গী চাষে প্রচুর খাদ্য লাগে। তাই একই জমিতে পরপর দুইবার চাষ না করা ভালো।

মেহেরপুরে একাঙ্গী চাষের অপার সম্ভাবনা আছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হওয়া যাবে। মেহেরপুর সদর উপজেলার সবজীগ্রাম খ্যাত শোলমারী, ঝাউবাড়িয়া, নওদাপাড়া, গোপালপুর ও গাংনীর বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে একাঙ্গী চাষ করা হয়েছে । স্থানীয়ভাবে বিক্রি কম হলেও বাড়ি থেকে ফড়িয়ারা এসে কিনে নিয়ে যায়। সেটা প্রক্রিয়াজাতকরণের পর, সারাদেশে ও দেশের বাইরে বিক্রি করা হয়।

মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মাঠে স্থানীয় কৃষক ইয়াদুল প্রায় ৫ বছর ধরে একাঙ্গীর চাষ করছেন। ভালো লাভ পাওয়ায় তিনি দিন দিন চাষ বৃদ্ধি করছেন। আশপাশের অনেক কৃষক তাকে দেখে একাঙ্গী  চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।

গোপালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে একাঙ্গী চাষ করতে বীজ, সার, পানি, লেবারসহ প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।। এতে এক বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ  হয়। চৈত্র- বৈশাখ মাসে জমি প্রস্তুত করে একাঙ্গীর বীজ রোপণ করতে হয়। হালকা পানি দিয়ে জমি রসালো রাখতে হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বছরের মাথায় প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭০/৮০ মণ একাঙ্গী পাওয়া যায়।

This post has already been read 11733 times!

Check Also

রপ্তানিমুখী আলু উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এসিআই আলু-১০ (ভ্যালেনসিয়া)

আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল যা চাল, গম এবং ভুট্টার পরে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ফসল। …