রাবি সংবাদদাতা: দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৬১ কোটি টাকা মূল্যের নাইট্রোজেন জাতীয় সার নষ্ট হয়, বলে দাবী করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) -এর কৃষি অনুষদের একদল গবেষক। তাদের দাবী, ফসল উৎপাদনের জন্য যে নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করা হয় তার মাত্র ২০-২৫ % কাজে লাগে, আর বাকী ৭৫-৮০% নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে অর্ধেকের ও বেশি পরিবেশে নষ্ট হয়।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ আয়োজিত ‘নাইট্রোজেন জাতীয় সারের টেকসই ব্যবস্থাপনা শীর্ষক’ কর্মশালায় উপস্থিত বক্তাগণ এসব তথ্য জানান। নাইট্রোজেন কিভাবে অপচয় হয় ও ক্ষতিকর দিকগুলো আলোচনা করা হয় উক্ত কর্মশালায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ, এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাসান -এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাবি কৃষি অনুষদের ডীন. অধ্যাপক ড মো. আব্দুল আলিম, বিশেষ অতিথি কৃষি অনুষদের এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট (রাজশাহী আঞ্চলিক শাখা) -এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুন অর রশীদ, এম.ফিল গবেষক মো: কামরুজ্জামান, মো: তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতিনিয়ত নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) দেশে নাইট্রোজেন সারের চাহিদা ছিল সাড়ে ২৪ লাখ মে.টন। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২০২২) সেই চাহিদা বেড়ে দাড়িয়েছে সাড়ে ২৫ লাখ মে.টন। সেই হিসেবে চলতি অর্থ বছরে নাইট্রোজেন সার নষ্টের পরিমাণ দাড়াবে ২০ লাখ ৪০ হাজার মে. টন; যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৬১ কোটি টাকা।
তাঁরা আরো বলেন, নাইট্রোজেন ফসলের উৎপাদানশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুতৃপূর্ণ উপাদান। এটি ছাড়া ফসল উৎপাদন কল্পনাই করা যায় না। এছাড়া স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করলে এই হিসেব আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে । সরকার প্রতিবছর বিরাট অংকের টাকা সার বাবদ ভর্তুকি প্রদান করে। তাই সার ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে হবে ; যদি ২০ থেকে ৩০% পর্যন্ত সার ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো যায়, তবুও বিরাট অংকের রাষ্ট্রীয় অর্থ সাশ্রয় হবে।
বক্তারা যোগ করেন, দীর্ঘ সময় নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহারের ফলে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষণ করে যা মানুষ ও পশুপাখির জন্য হুমকি। এটি বাতাস, পানি ও মাটি দূষণ করে; জীববৈচিত্রকে ধ্বংস করে এবং গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসেবে নির্গত হয়; ওজন স্তরকে ক্ষয় করে। এছাড়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগ করলে একদিকে যেমন পরিবেশকে দূষন করে। অন্যদিকে কৃষির উৎপাদনশীলতা, খাদ্য নিরাপত্তা, বাস্তসংস্থান ও মানুষের স্বাস্থ্য (থাইরয়েড ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, টেস্টিকুলার ক্যান্সার, স্টোমাক ক্যান্সার, ডায়াবেটিস) ইত্যাদি রোগ হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতাকে হুমকির সম্মুখীন করে।
উল্লেখ্য, ইউকেআরআই জিসিআরএফ ও সাউথ এশিয়ান নাইট্রোজেন হাব প্রকল্পের অর্থায়নে এবং কৃষি অনুষদের এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের ব্যস্থাপনায় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের ২৬ জন কৃষক উপস্থিত ছিলেন।