রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

 ব্রি  উদ্ভাবিত রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ জিংক সমৃদ্ধ ধানের দুটি নতুন জাত অবমুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বোরো মওসুমের ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ জিংক সমৃদ্ধ দুইটি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের অবমুক্তির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। নতুন দুইটি জাত হচ্ছে ব্রি ধান১০১ ও ব্রি ধান১০২।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৬তম সভায় জাতগুলো সারা দেশজুড়ে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাত সংখ্যা হলো ১০৮টি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. সায়েদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রি ধান১০১:

ব্রি ধান১০১ বোরো মওসুমের ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী জাত।  এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭২ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০১ এর ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৯৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। এর দানা লম্বা ও চিকন এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৪২ দিন যা বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান৫৮ এর চেয়ে ৪ (চার) দিন আগাম। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৩.১ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.০ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯.৮ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।

জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হলো ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী। এ জাতটিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী প্রকট জিন Xa21, Xa4 ও Xa7 বিদ্যমান এবং আর্টিফিশিয়াল ইনোকুলেশনে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধী (স্কোর-১) প্রদর্শন করে।  এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি বোরো ২০১৯-২০ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়।

উক্ত কৌলিক সারিটির জীবনকাল ব্রি ধান৫৮ এর আগাম এবং ফলন বেশী হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০২০-২১ মওসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী বলে বিবেচিত হওয়ায় কৌলিক সারিটি বোরো মওসুমের ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।

ব্রি ধান১০২

ব্রি ধান১০২ বোরো মওসুমের একটি উচ্চমাত্রার জিংক সমৃদ্ধ জাত।  এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৮.১ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০২ এর ফলন হেক্টর প্রতি ৯.৬০ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। এর দানা লম্বা ও চিকন এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৫০ দিন যা বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে ২ (দুই) দিন আগাম। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৭ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৮.০ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।

জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হলো উচ্চমাত্রার জিংক সমৃদ্ধ (২৫.৫ মিলি গ্রাম/কেজি) যা ব্রি ধান২৯ (১৮.২ মিলি গ্রাম/কেজি) এর চেয়ে ৭.৩ মিলি গ্রাম/কেজি বেশী ।  এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে চার বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি বোরো ২০১৯-২০ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়।

উক্ত কৌলিক সারিটি ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে জিংক এবং ফলন বেশী হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০২০-২১ মওসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় কৌলিক সারিটি বোরো মওসুমের উচ্চমাত্রার জিংক সমৃদ্ধ জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।

This post has already been read 3900 times!

Check Also

জলঢাকায় সোনালী ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

বিধান চন্দ্র রায় (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। …