ডা. মো. আ. ছালেক : বর্তমানে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল একটি সেক্টর। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে, এর মধ্যে ব্রয়লার পালন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। দারিদ্র ও বেকারত্ব দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক কৃষি ব্যবসা হিসাবে আজ লাখ লাখ বেকার পুরুষ ও নারী এবং প্রান্তিক কৃষক-কৃষাণী ব্রয়লার খামার গড়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে ব্রয়লার মাংসের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আমাদের দেশে নব্বই দশকের শুরু থেকে ব্রয়লার শিল্পের দ্রুত সম্প্রসারণ হয়। বর্তমানে বছরে প্রায় ৭০ কোটি ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে এবং প্রতি বছর ১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে (সারণী-১)। এছাড়া সোনালী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে যা প্রায় ব্রয়লার বাচ্চার ২৫-৩০%। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৩৫,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ৬০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে (সূত্রঃ বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাজস্ট্রিস সেন্ট্রাল কাউন্সিল- বিপিআইসিসি, ২০২০)। এই খাতটি বিপুল সম্ভাবনা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণের ব্যাপক অবদান রাখছে।
এ পর্যন্ত সারাদেশে ছোট-বড় ৭০,০০০ বাণিজ্যিক ব্রয়লার খামার গড়ে উঠেছে (সূত্রঃ ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন (বাংলাদেশ শাখা) এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন খামার গড়ে উঠছে। বার্ষিক মাথাপিছু ব্রয়লার মাংস গ্রহণের পরিমাণ মাত্র ৭ কেজি যা চাহিদার তুলনায় কম (সূত্রঃ বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাজস্ট্রিস সেন্ট্রাল কাউন্সিল, ২০২০ এবং লেখকের তথ্য বিশ্লেষণ)। তবে দিন দিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনপ্র্রতি যদি আরও ১ কেজি বেশি মাংস গ্রহণ বাড়ে তাহলে বর্তমান উৎপাদনের প্রায় ২০% বাড়াতে হবে।
ব্রয়লার বাচ্চা ও মাংস উৎপাদন
ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন গত ৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১.৫ গুণ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, এই বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।
সারণী-১: ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন, মাংস উৎপাদন ও মাথাপিছু মাংস গ্রহণ
ব্রয়লার ব্যবসায় চাহিদা সৃষ্টির এবং জনপ্রিয়তার কারণগুলো নিম্নরূপ:
- ব্রয়লার পালন করে একটি পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারে।
- ব্রয়লার পালন একটি লাভজনক ব্যবসা।
- কর্মহীন মহিলা এবং বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানে সাহায্য করে।
- বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না।
- অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্রয়লার পালন করা যায়।
- অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় এবং খুবই কম সময়ে বিনিয়োগকৃত টাকা লাভসহ উঠে আসে।
- নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা সহজেই আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
- সারা বছর ব্রয়লার উৎপাদন করা যায়।
- মাছ এবং অন্যান্য গবাদি পশু-পাখির মাংসের তুলনায় ব্রয়লার মাংসের দাম কম।
সর্বোপরি, সবদিক বিবেচনা করে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশে ব্রয়লার ব্যবসার সুযোগ এবং সম্ভবনা আছে।
লেখক: চীফ টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার, এসিআই এনিম্যাল হেলথ।