সাভার র্সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে বর্তমানে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। এ সাফল্যের সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পরে তিনি প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন, যার সুফল আমরা আজকে পাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর কনফারেন্স হলে ইনস্টিটিউটের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন গবেষণায়। গবেষণার মাঝেই রয়েছে সৃষ্টির উল্লাস। আমাদের নতুন কিছু সৃষ্টি করতে হবে, পুরাতন সৃষ্টিসমূহকে নতুনভাবে উন্নত করে তুলতে হবে। গবেষণা কাজে সাফল্য দেখাতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির গতি, গবেষণার গতি, প্রশাসনিক কাজের গতি অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালিয়ে যেতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী এবং সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ-২) এস এম ফেরদৌস আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বিএলআরআই এর বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের গবেষণাসমূহের কার্যকারিতা থাকতে হবে, যতে করে গবেষণা আরও বেশি করে দেশের কাজে আসে। সরকার গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে, নানা ধরনের ফেলোশিপের ব্যবস্থা করছে। ইতোমধ্যেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা ইতোপূর্বে যে গতিতে কাজ করতার, তার চেয়েও বেশি গতিতে কাজ করতে হবে। একই সাথে আমাদের নিজেদের এবং দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের কথাও মাথায় রাখতে হবে, উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহের সাথে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করতে হবে। এসময় তিনি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কর্মদক্ষতার প্রশংসাও করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, বিএলআরআই বর্তমান সরকারের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি এর প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ৯১টি প্রযুক্তি ও প্যাকেজ উদ্ভাবন করেছে, যা দেশের তরুণ উদ্যোক্তা ও সাধারণ খামারিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং সার্বোপরি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রতিশ্রুতি দেন দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও নতুন দিনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় বিএলআরআই ভবিষ্যতে আরও বেগবান হয়ে কাজ করে যাবে। একই সাথে কর্মশালায় উপস্থিত হওয়া সকল অতিথিকে এবং কর্মশালা আয়োজনের সাথে জড়িত সকলকে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এর আগে সকাল ১০.০০ ঘটিকায় পবিত্র কোরআন হতে তেলোয়াত এবং পবিত্র গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এর পর আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং কর্মশালার সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন বিএলআরআই এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (রুঃ দাঃ) ও ভেড়া উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জিল্লুর রহমান।
করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে উক্ত আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালকগণ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আগত সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, প্রাণী ও পোল্ট্রি উৎপাদন ও খামার ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞ এবং সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিএলআরআই-এর বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম হতে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি একযোগে বিএলআরআই-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক গ্রুপ এবং ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উদ্বাধনী অনুষ্ঠানের পরে শুরু হয় কারিগরি সেশন। এবারের কর্মশালায় পাঁচটি সেশনে সর্বমোট ২৮ (আটাশ) টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে প্রথম দিনে “অ্যানিম্যাল অ্যান্ড পোল্ট্রি ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিকস” শীর্ষক প্রথম সেশনে ০৭ (সাত) টি এবং “ফিডস, ফডার অ্যান্ড নিউট্রিশন” শীর্ষক দ্বিতীয় সেশনে ০৭ (সাত) টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। আর ২৮/০১/২০২২ খ্রিঃ তারিখে দ্বিতীয় দিনে “বায়োটেকনোলজি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স” শীর্ষক তৃতীয় সেশনে ০৭ (সাত) টি, “অ্যানিম্যাল অ্যান্ড পোল্ট্রি ডিজিজ অ্যান্ড হেল্থ” শীর্ষক চতুর্থ সেশনে ০৪ (চার) টি এবং “সোশিওইকোনোমিকস অ্যান্ড ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ” শীর্ষক পঞ্চম ও সর্বশেষ সেশনে ০৩ (তিন) টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিটি সেশনে নিয়মিত সভাপতি ও সহ-সভাপতি, অংশগ্রহণকারী, পর্যালোচনাকারীদের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমেও অংশগ্রহণকারী ও পর্যালোচনাকারীদের জুমের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপনার পাশাপাশি কর্মশালায় বিভিন্ন গবেষণার উপর মোট ৩৪ (চৌত্রিশ) টি পোস্টারও প্রদর্শন করা হয়।