বিনামরিচ-২ জাতটি দেশের বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোন কোন ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও রোগবালাই এর আক্রমণ দেখা যায়নি। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব হতে পারে।
ড্যাম্পিং অফ/গোড়া পচা/মূল পচা: চারা অবস্থায় ছত্রাক দ্বারা এই রোগ ঘটে থাকে । বীজ বপনের পর পরই বীজ পচে যেতে পারে অথবা চারা মাটি থেকে উঠার পরে চারা গাছ ফ্যাকাশে, লিকলিকে ও দুর্বল হয়। কচি চারায় গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও চারা ঢলে পড়ে মারা যায়। এই রোগ দমন করতে হলে, মরিচ বীজ প্রোভেক্স অথবা রিডোমিল গোল্ড @ ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে। আক্রান্ত অবস্থায় কুপ্রাভিট অথবা অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঢলে পড়া: মূল জমিতে চারা রোপণের পর মরিচ গাছের দৈহিক বৃদ্ধি অবস্থায় এই রোগ হতে পারে। প্রথমে গাছের নিচের দিকের কান্ডে আক্রমণ করে এবং গাঢ় বাদামি ক্যাংকার সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় মাটির উপরিভাগ বরাবর গাছের কান্ড কালো হয়ে ৮-১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে রোগাক্রান্ত গাছটি ঢলে পড়ে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক অটোস্টিন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার দিকে এবং গোড়ার মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
অ্যানথ্রাকনোজ/ ফল পচা: এই রোগ সাধারণত বয়স্ক গাছে অর্থাৎ পাতা, ফল ও কান্ডে হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা, কান্ড ও ফল ক্রমশ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ফল ও কান্ডে গোলাকৃতির কালো দাগ দেখা যায়। ফলের গায়ে কালো বলয় বিশিষ্ট গাঢ় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ফলকে পঁচিয়ে দেয়। আক্রান্ত ফল ঝরে পড়ে। এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ছত্রাকনাশক টিল্ট ২৫০ ইসি @ ০.৫ মি.লি. হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
এফিড বা জাব পোকা: সাধারনত পাতার নিচের দিকে বসে রস চুষে খায় ফলে পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট মিশিয়ে স্প্রে করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি বা ডাইমেথয়েট বা কারাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সাদা মাছি: সাধারণত কচি চারা গাছ আক্রমণ করে। ক্ষতির ধরন- কচি পাতার নিচে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ অথবা সাবন-পানি ব্যবহার করে এদের আক্রমণ কমানো সম্ভব। নিম বীজের নির্যাস (আধা ভাঙ্গা ৫০ গ্রাম নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) স্প্রে করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে কীটনাশক এডমায়ার ২০০ এসএল (১০ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে) ভালোভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মাইট বা মাকড়: আক্রান্ত অবস্থায় পাতার শিরার মধ্যকার এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। কচি পাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ড হলে পাতা নিচের দিকে মুঁড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ ইসি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২.০ মিলি হারে) বা ভার্টিমেক ১৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি হারে পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব।
লেখক পরিচিতি:
ড. মো. রফিকুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা, বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২।
ড. মো. শামছুল আলম, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা, বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ–২২০২
মো. নাজমুল হাসান মেহেদী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা, বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ–২২০২
মরিচের বীজ/চারা পেতে এবং বিস্তারিত আরো জানতে : ড. মো. শামছুল আলম, ঊর্ধধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিনা। মোবাইল: ০১৭১১১২৪৭২২