ডা. মো. আ. ছালেক : আধুনিক বাণিজ্যিক ব্রয়লার উৎপাদনে অল্প সময়ের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশী মূলধনের প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে এ মূলধন সংগ্রহ করা যেতে পারে। ব্রয়লার ব্যবসার অর্থ বিনিয়োগ-ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের হয়, যথা-
১. নিজস্ব পুঁজি বিনিয়োগ
২. অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পুঁজি বিনিয়োগ
৩. ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মূলধন সংগ্রহ
৪. চুক্তিবদ্ধ বা কন্ট্রাক্ট গ্রোয়িং ব্রয়লার উৎপাদন পদ্ধতি
৫. হ্যাচারি ও ফিডমিল এজেন্টের সাথে চুক্তিভিত্তিক ব্রয়লার উৎপাদন
ব্রয়লার ব্যবসায় অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া
নগদ অর্থপ্রবাহ বা নগদ টাকা আদান-প্রদান বলতে বোঝায় ব্যবসা করতে গেলে ব্যবসা খাতে উদ্যোক্তা কত টাকা নগদ আদান এবং কত টাকা নগদ প্রদান করলেন- এই আদান ও প্রদানের হিসাবকেই নগদ অর্থপ্রবাহ বা অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া বলে। নিম্নে অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবরণ ও ছক প্রদান করা হলো-
নগদ অর্থ প্রদান
নগদ অর্থ বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট মাসে খাত সমূহের যে পরিমাণ টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ লেনদেনের সময় নগদ টাকা দেওয়াকে নগদ টাকা প্রদান বলে।
নগদ অর্থ অবশিষ্ট
নগদ অর্থ অবশিষ্ট বলতে বোঝায় বিনিয়োগকৃত নগদ টাকা থেকে নির্দিষ্ট মাসে নির্দিষ্ট খাতসমূহে টাকা প্রদানের পর যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকে। অর্থাৎ লেনদেনের পর ক্যাশ বাক্সে যে টাকা বা অর্থ থাকে তাকে নগদ টাকা/অর্থ অবশিষ্ট বলে।
নগদ অর্থ আদান
নগদ অর্থ আদান বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট মাসে নির্দিষ্ট খাতসমূহের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ জমা হয় বা আসে। অর্থাৎ লেনদেনের সময় নগদ অর্থ গ্রহণকে নগদ অর্থ আদান বলে।
নগদ অর্থ স্থিতি
নির্দিষ্ট মাসে নির্দিষ্ট খাতসমূহে অর্থ আদান ও প্রদানের পর অবশিষ্ট নগদ অর্থই হলো নগদ অর্থ স্থিতি। অর্থাৎ লেনদেনের আদান-প্রদান শেষে অবশিষ্ট অর্থকে নগদ অর্থ স্থিতি বলে।
ব্রয়লার ব্যবসায় হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি
যে কোনো ব্যবসায়িক কাজে লেনদেন বা আদান প্রদান ছাড়া কোনো ব্যবসাই হতে পারে
না। তবে এসব লেনদেন বা আদান প্রদান আর্থিকভাবে পরিমাপযোগ্য। ব্যবসায়ের
লেনদেনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে তারিখ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে লিখে রাখাকেই বলে হিসাব সংরক্ষণ।
হিসাব সংরক্ষণ প্রয়োজনীয়তা
হিসাব সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যবসার একটি মূল বিষয়। ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে সঠিক ও সুশৃঙ্খল হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতির ওপর। ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভবপর হয় সঠিক হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে। এছাড়া হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানা যায়।
♦ ব্যবসার জন্য টাকা বা অর্থ কোথা থেকে আসবে।
♦ টাকা কোথায় এবং কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে।
♦ ব্যবসায় কি পরিমাণ লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে।
♦ ব্যবসায় কি পরিমাণ টাকা পাবে।
♦ বর্তমানে ব্যবসায়ে মূলধন কত এবং টাকা কোথায়, কিভাবে আছে। সুশৃঙ্খল হিসাবরক্ষণ একজন উদ্যোক্তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে, যার ফলে একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা সফলভাবে তার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। যেমন-
♦ অর্থ বা টাকা-পয়সা সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করতে সাহায্য করে।
♦ লাভ/ক্ষতি জানা যায়।
♦ ব্যবসা খাতে প্রদানকৃত টাকার হিসাব পেতে সাহায্য করে।
♦ কমপক্ষে আগামী ছয় মাসের টাকার প্রবাহ জানা যায়।
♦ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সম্পর্কে জানা যায়।
হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যবসায়ী পরবর্তী সময়ে মাসিক ও বাৎসরিকভাবে জমা-খরচের হিসাব করে তার ব্যবসার লাভ এবং ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
লেখক: চীফ টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার, এসিআই এনিম্যাল হেলথ।