নাহিদ বিন রফিক : ফল ধরার বয়স অতিক্রম করেও যদি একেবারেই ফল না দেয়, তাহলে তাকে বলা হয় অফলন্ত গাছ। গাছ থেকে নিয়মিত এবং আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না- এমন অভিযোগ কৃষকরা প্রায়ই করে থাকেন। যদিও উদ্ভিদের ফল ধারণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এছাড়া বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফল গাছের এ ধরনের সমস্যাকে সাধারণত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে ঠিক সময় ও নিয়মিত গাছে ফুল না আসা, দ্বিতীয়টি হলো ফুলের পরাগায়ণ ও নিষিক্তকরণে ব্যর্থতা এবং অন্যটি হচ্ছে ফল ঝরে পড়া। এসব সমস্যার সবক’টি সমাধান সম্ভব না হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগুলো অনেকাংশে এড়ানো যায়। তাই গাছকে ফলবতী করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা হচ্ছে-
ভিন্নাবাসপুষ্পী বৃক্ষের ক্ষেত্রে বাগানে স্ত্রী ও পুরুষ লিঙ্গের গাছ লাগিয়ে অকৃত্রিম পরাগায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। একই জাতের মধ্যে পরাগায়ণে অসামর্থ্য দেখা দিলে সেখানে বিভিন্ন জাতের রেণু সরবরাহকারী গাছ রোপণ করা দরকার।
গাছপ্রতি আলাদাভাবে বছরে বর্ষার আগে এবং পরে সুষম সার দিতে হবে। সার অবশ্যই জৈব এবং অজৈব সারের সমন্বয়ে হওয়া চাই। ভরদুপুরে একটি গাছের ছায়া যতটুকু মাটিতে পড়ে, ততটুকু জায়গা জুড়ে ছ’ ইঞ্চি পরিমাণ ভালোভাবে কুপিয়ে সার দেওয়া উচিত।
খাদ্য তৈরি করার জন্য গাছে পর্যাপ্ত সূর্যালোকের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বিষয়ক বৈষম্য সৃষ্টি হলে ফল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এজন্য গাছের মূল ছাঁটাই, বাকল কর্তন এসবের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু অনুপাত রক্ষার প্রচেষ্টা নেওয়া।
বেশি পরিমাণে ভালো গুণসম্পন্ন ফুল ও ফল উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় গাছের অঙ্গ ছাঁটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরনো এবং অতিরিক্ত ডালপালা ধারালো দা অথবা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বর্দোপেস্ট অথবা আলকাতরা কিংবা রঙ লাগিয়ে দিতে হবে। গাছের শর্করার (খাদ্য) সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য ফুল, ফল পাতলা করা দরকার।
মাটির রস সংরক্ষণ করতে গাছের গোড়ায় শুকনো কচুরিপানা, করাতের গুঁড়ো, চিটাধান, গাছের শুকনো পাতা, খড় এসব দিয়ে মালচিং করা। শুল্ক মৌসুমে সেচ ব্যবস্থা এবং বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে জন্য নিষ্কাশন খুবই জরুরি।
রোগ-পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া। তবে এ ব্যাপারে প্রতিরোধই শ্রেয়। এজন্য গাছের অবাঞ্ছিত অংশ অপসারণ করা উচিত।
ফলগাছে কিংবা এর আশপাশে মৌমাছি পালন দ্বারা পরাগায়ন বৃদ্ধি করে ফলের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
পেয়ারা গাছের ডাল নুইয়ে দিলে প্রশাখা জন্মে, আর এ প্রশাখা বাড়ানোর কারণে ফল বেশি ধরে। ধোঁয়া প্রয়োগের মাধ্যমেও অনেক গাছের ফলোৎপাদন বাড়ানো যায়।
আগাছা ফলগাছের অন্যতম শত্রু। এরা বিভিন্নভাবে গাছের ক্ষতি করে। খাবারে ভাগ বসায়। অনিষ্টকারী পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে। কিছু কিছু পোকা ভাইরাস রোগের জীবাণু বহন করে। তাই বাগানকে সবসময় আগাছামুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়।
লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষি বিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল; মোবাইল নম্বর: ০১৭১৫৪৫২০২৬