মৃত্যুঞ্জয় রায় : পেঁপে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল যা সবজি ও ফল দুভাবেই খাওয়া হয়। দিন দিনই দেশ পেঁপের অঅবাদ বাড়ছে। দেশের অনেক জায়গায় এখন পেঁপের বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে বেশ কিছু বড় বড় পেঁপের বাগান আছে। পাহাড়েও এখন বেশ পেঁপের চাষ হচ্ছে। কিন্তু পেঁপে চাষ করতে গিয়ে খামারিরা এখন বেশ কিছু সমস্যায় পড়ছেন। এসব সমস্যার মধ্যে পেঁপের রোগ এক মহা সমস্যা। বিশেষ করে নানা ধরনের ভাইরাস রোগে পেঁপে বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দেশে পেঁপে বাগানে অন্তত: চারটি ভাইরাস রোগ দেখা যায়। এগুলো হল পেঁপের পাতা কোঁকড়ানো, মোজেইক, রিং স্পট ও সবুজ রেখা রোগ। এসব ভাইরাস রোগের মধ্যে পাতা কোঁকড়ানো ও মোজেইক রোগ প্রায় সব পেঁপে বাগনেই দেখা যায়। ভাইরাস রোগের কোন ওষুধ নেই। তাই চাষিরা এসব রোগ দেখলে অযথা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ছিটিয়ে টাকা নষ্ট করেন। পেঁপে বাগানে যাতে এ রোগ না হয় বা হলে যেন আর না ছড়ায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোজেইক রোগের মত পাতা কোঁকড়ানো রোগও পেঁপের একটি মহা ক্ষতিকর প্রধান রোগ। এ রোগ দেশের প্রায় সব অঞ্চলের পেঁপে গাছেই দেখা যায়। থমাস ১৯৩৯ সালে ভারতের তামিলনাড়–তে সর্বপ্রথম এ রোগটির সন্ধান দেন। তবে তখন Thomas and Krishnaswami -এর নাম বলেছিলেন Crinkle রোগ। পরে ১৯৪৬ সালে সেন ও তার সঙ্গীরা এ রোগের নামকরণ করেন পাতা কোঁকড়ানো বা Leaf curl রোগ এবং তারা বলেন যে এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছের রসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। পেঁপের পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস জীবাণু দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়।
রোগের লক্ষণ : এ রোগের প্রধান লক্ষণ হল পাতা কুঁকড়ে যাওয়া। কুঁকড়ে যাওয়া পাতাগুলো হয় মচমচে ও ছোট। তীব্র আক্রান্ত পাতাগুলো ছেঁড়া ছেঁড়া হয় ও পাতার শিরা স্বচ্ছ হয়ে যায়। গাছের মাথার দিকে কোঁকড়ানো পাতাগুলো পেয়ালার আকৃতি ধারণ করে। পাতার কিনার থেকে কোঁকড়ানো বা মোড়ানো শুরু হয়। অনেক সময় পাতার শিরা মোটা বা পুরু হয় এবং গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করে। পাতার বোঁটা আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। পাতা চামড়ার মত পুরু ও মচমচে হয়ে যায়। পাতার উপরে শিরার মধ্যবর্তী স্থানসমূহ উঁচু হয়ে ওঠে। আক্রান্ত গাছে সাধারণত: কোন ফুল অঅসে না ও খুবই কম ফল ধরে। শেষে আক্রান্ত পাতা ঝরে যায় ও গাছের বৃদ্ধি থমকে যায়।
রোগের বিস্তার : পেঁপের পাতা কোঁকড়ানো রোগের ভাইরাস জীবাণু কোন ক্ষত বা বীজের মাধ্যমে সুস্থ্য গাছে ছড়ায় না। Bemisia tabaci প্রজাতির সাদা মাছি এ রোগের ভাইরাস ছড়ায়। এ প্রজাতির সাদা মাছি তামাক ও টমেটো গাছেও ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাদা মাছি পাতা কোঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত পেঁপে গাছ থেকে রস খেলে তার দেহে ভাইরাস জীবাণু প্রবেশ করে। সেই সাদা মাছি আবার যখন অন্য কোন সুস্থ গাছে রস খাওয়ার জন্য বসে, তখন তার দেহ থেকে ভাইরাস নতুন গাছে চলে যায়। ভাইরাস জীবাণু প্রবেশের পর ধীরে ধীরে সেসব ফসলেও রোগ বাড়তে থাকে। পেঁপে ছাড়া তামাক, টমেটো, জিনিয়া, হলিহক ইত্যাদি গাছও এ রোগের জীবাণুর বিকল্প আশ্রয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা
- এ রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে ধ্বংস করতে হবে।
- পেঁপে বাগানের আশে পাশে টমেটো বা তামাক গাছ লাগানো চলবে না।
- পেঁপে বাগানে সাদা মাছির উপস্থিতি দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন মেটাসিস্টক্স স্প্রে করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।