নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন জেলা ও উপজেলায় সাধারণ আবেদনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তন করা হলে জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিসহ সকলেই উপকৃত হবে।
এজন্য ভূমিমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পের ন্যায় জেলা-উপজেলায় সাধারণ আবেদনে অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তনের জন্য আজ নির্দেশ দেন। আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির ৬৭তম সভায় সভাপতিত্ব করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ প্রদান করেন ভূমিমন্ত্রী। এ সময় ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে জারিকরা এক পরিপত্রের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের সুবিধা চালু করে। এখন land.gov.bd ভূমিসেবা কাঠামো থেকে অথবা সরাসরি jm.lams.gov.bd ওয়েব পোর্টালে গিয়ে জলমহাল ইজারার জন্য আবেদন দাখিল করা যাচ্ছে। এছাড়া, জলমহাল ইজারার আবেদন অনলাইনে দাখিল এবং ইজারা প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উপর্যুক্ত ওয়েবপোর্টাল থেকেই জানা যাচ্ছে। সাধারণত ২০ একরের ঊর্ধ্বে সরকারি জলমহাল ইজারার অনুমোদন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
আজকের সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আব্বাছ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব (সায়রাত) মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন সহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া, ইজারার জন্য প্রস্তাবিত জলমহাল সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকবৃন্দ এবং তাঁদের প্রতিনিধি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজ-নিজ জেলা থেকে সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আজকের সভায় উপস্থাপিত ইজারা আবেদনের শতভাগই অনলাইনের মাধ্যমে দাখিল করা হয়েছে। অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিল করার কারণে মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা ইজারা প্রক্রিয়ার নানাবিধ জটিলতা এড়াতে পেরেছেন। এছাড়া এ সম্পর্কিত যাতায়াত কমে যাওয়ায় সমিতির সদস্য মৎস্যজীবীদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ ১৪২৯-১৪৩৪ বঙ্গাব্দ মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল ইজারার জন্য বিভিন্ন জেলার ৪৬৮টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড অনলাইনে আবেদন দাখিল করে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আজ রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ এবং কিশোরগঞ্জ জেলার মোট ৫৫টি প্রস্তাব ও বিবিধ ৩টি প্রস্তাব সরকারি জলমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারি জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটি ইজারার অনুমোদন দেয়।
উল্লেখ্য, বিল, হাওর, বাওর, নিম্ন জলাভূমি ও নদ-নদীতে মৎস্য আহরণের এলাকাকে জলমহাল বলা হয়। এক হিসাবমতে ছোটো-বড় মিলিয়ে দেশের জলমহালের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। এসব ইজারা দিয়ে বছরে প্রায় শতকোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। বেশ কয়েকটি জলমহাল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইজারা-বিহীন রাখা হয়েছে যেমন, দিনাজপুরের রামসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর। মাছ সংগ্রহের অভয়াশ্রম ঘোষিত জলমহালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওড়, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড় ইত্যাদি।