নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “প্রাণিসম্পদ খাত হবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বৃহত্তর খাত। এ খাত হবে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাওয়ার একটি খাত। এ খাত হবে দেশের মানুষের খাবারের চাহিদা মেটানোর সবচেয়ে বড় একটি খাত। এ লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে”।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরস্থ পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী, ২০২২’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিশ্চিয়ান বার্জার, এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ড. এফ এইচ আনসারী, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মো. মসিউর রহমান ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন বক্তব্য প্রদান করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা,রং ও খামারিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, “রাষ্ট্র প্রাণিসম্পদ খাতকে উদারভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। করোনায় যখন এ খাত নুয়ে পড়ছিল, তখন সরকারের উদ্যোগে বিদেশ থেকে পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড ও এনিমেল ফিড আনার জন্য সরাসরি বিভিন্ন দেশের হাইকমিশন ও বন্দরে যোগাযোগ করা হয়েছে, পরিবহন সহজ ও উন্মুক্ত করাসহ সর্বত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে যারা শিল্প স্থাপন করতে চায় তাদের জন্য উৎসে কর এবং অপ্রয়োজনীয় কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যাতে এ খাত বিকশিত হতে পারে। শুধু সরকারের পক্ষে একা সব কিছু করা সম্ভব নয়। সরকার পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবে, নীতি- নির্ধারণী সহযোগিতা দেবে। বেসরকারি খাত অথবা সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে।”।
মন্ত্রী আরো বলেন, “দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। আজকের বাংলাদেশকে বলা হয় উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা, নীতিনির্ধারণ ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণে”
প্রধান অতিথি আরো বলেন, “দেশে মাংস উৎপাদন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেটা অতীতে কল্পনার বাইরে ছিল। আমরা বিদেশ থেকে মাংস আনব না বরং বিদেশে মাংস রপ্তানি করব-এ প্রত্যয় আমাদের রয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “প্রাণিসম্পদ খাতে এখন আমাদের প্রয়োজন গুণগত ও টেকসই উন্নয়ন। উৎপাদিত মাংস যেন পুষ্টি-আমিষের চাহিদা মেটায়, খাবারের চাহিদা মেটায়। সেটা যেন গুণগত মানে উন্নত থেকে উন্নতর হয়। সে লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের গুণগত মানোন্নয়নে আমরা দেশে আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করেছি। এ ব্যাপারে বেসরকারি খাত উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে আসলে তাদের সহায়তা করা হবে”।
প্রাণিসম্পদ খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন জাতি গঠনে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “আমাদের নতুন প্রজন্ম, মধ্যবর্তী বয়সের মানুষ, বয়োজ্যেষ্ঠ তারা যদি পুষ্টিকর খাবার না পায় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হবে না। মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ হবে না। অপরদিকে আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এ খাতকে বিকশিত করার জন্য সবাই মিলে ভূমিকা রাখতে হবে”।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এ প্রদর্শনী একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় প্রদর্শনীতে ভিন্ন ভিন্ন ভ্যালু চেইনভিত্তিক ১১০টি স্টল স্থাপন করা হয়। এসব স্টলে উন্নত জাতের এবং অধিক উৎপাদনশীল গবাদিপশুসহ বিভিন্ন প্রাণী তথা গাভী, বাছুর, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগী, হাঁস, দুম্বা, কবুতর ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও প্রদর্শনীতে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি, ঔষধ সামগ্রী, টিকা, প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ সরঞ্জাম, মোড়কসহ পণ্য বাজারজাতকরণ প্রযুক্তির স্টলও স্থাপন করা হয়।