নিজস্ব প্রতিবেদক: “গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে অত্যন্ত ডাইনামিকভাবে খোলামেলা চিন্তা করতে হবে এবং নতুন নতুন জাত সংযোজন করতে হবে। আজকাল তো সবকিছুই সম্ভব। ক্যাটেলের পাশাপাশি মাছ ও মুরগীর এফসিআর উন্নয়নের দিকেও নজর দিতে হবে” বলে মন্তব্য করেছেন এসিআিই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরস্থ পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী, ২০২২’ এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ড. আনসারী এসব কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।
ড. আনসারী বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশে দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ বেড়েছে পাঁচ গুণ, মাংস গ্রহণ বেড়েছে ছয় গুণ, ডিম গ্রহণ বেড়েছে তিন গুণ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আমাদের দেশের বিজ্ঞানী, খামারি ও প্রাইভেট সেক্টর অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডের ডেইরি শিল্পের উন্নয়নকে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশটির ক্যাটেল পপুলেশন বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ হওয়া স্বত্বেও তাঁরা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর ডেইরী পণ্য রপ্তানিকারক। এই চিত্র থেকে থেকে বুঝা যায়, ডেইরী সেক্টর উন্নয়নে আমাদের জাত উন্নয়ন, নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত খাবারসহ খামার ব্যবস্থাপনা, বায়ো সিকিউরিটির উপর অনেক কাজ করতে হবে। জাত উন্নয়নের জন্য ইমব্রায়ো ট্রান্সফার, সেক্স সিমেন ব্যবহার সহ সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উচ্চ গুনসম্পন্ন উৎপাদন পেতে হলে, অবশ্যই আমাদের এফসিআর উন্নত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে ১২ কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি গরুর মাংস উৎপাদন করা যায়, অথচ আমি বেলজিয়ামের সেই প্রদর্শনীতে বেলজিয়াম ব্লু প্রজাতির যে ক্যাটেল দেখেছি, সেটি ৪-৫ কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি মাংস উৎপাদন করে এবং দুই বছরে একটি ক্যাটেল থেকে ২.৫ টন মাংস পাওয়া যায়।
“আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে ৪ বছর আগে আমার বেলজিয়াম সফরের সেই ক্যাটেল শোতে অংশগ্রহণ করার কথা মনে পড়ছে। সেখানে সে দেশের সব বিখ্যাত মডেল ছেলে মেয়েরা গরুর দড়ি হাতে নিয়ে মাঠে ক্যাটেল প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। সেখান থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে এরকম ক্যাটেল শো আয়োজনের। আজকের এই প্রদর্শনী উদযাপিত হতে দেখে আমি আবেগ আপ্লিত, আজকে আমার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি মনে করি, এই আয়োজন থেকে দেশের খামারি, প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী সকলে উপকৃত হবেন” -যোগ করেন ড. আনসারী।
বিপিআইসিসি ও বিডিএফএ’র প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্টিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মারস এসোসিয়েশন খামারিদের সংগঠিত করছে এবং খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছে, যার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব সম্পর্কে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী একজন বিশিষ্ট প্রাণিবিজ্ঞাণী। তিনি পশু পাখির ভাষা জানেন, খামারির ভাষা বুঝেন। তাই প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও উপযুক্ত সমাধান করা তাঁর জন্য অত্যান্ত সহজ এবং তিনি সেই সমস্যা সমাধানকল্পে যুগোপযোগী পলিসি নির্ধারণ করেন, যা অত্যান্ত প্রসংশনীয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক একজন ডাইনামিক ব্যাক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এগিয়ে যাচ্ছে ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সেবার নতুনত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সম্প্রতি চালু হওয়া মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী ও চমকপ্রদ উদ্যোগ। এখন থেকে ভেটেরিনারি ক্লিনিক পশু ও প্রাণির কাছে যাবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক উদ্বোধনের দিন মাননীয় মন্ত্রী আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা কিভাবে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে অবদান রাখতে পারি। আমি আজকে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, সরকারের পলিসি সাপোর্টের গতি এভাবে অব্যাহত থাকলে পোল্ট্রি শিল্পের মতোই আমরা প্রাইভেট সেক্টর, ডেইরী শিল্পেও অতি অল্প সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য বয়ে আনবো।
ড. আনসারী জানান, এসিআই এগ্রিবিজনেস দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করতে বব্ধ পরিকর। আমরা প্রায় কম্পিলিট ক্যাটল, পোলট্রি এবং অ্যাকোয়া ভ্যালু চেইন নিয়ে কাজ করি। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হিসাবে রোবটিক ভ্যাকসিনেশন, ডেইরী ভ্যাকসিনেশন, প্রাণী ফার্মাসিউটিক্যালস, উন্নত বাছুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, পশু জেনেটিক্স, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি এবং ক্লিনিক এসব সার্ভিস দিয়ে থাকি।
“খামারিদের সাথে অনলাইন প্লাটফর্ম যেমন- খামারি, রুপালি, সোনালি এর মাধ্যমে সম্প্রসারণেরও কাজ করছি। ফরওয়ার্ড লিংকেজ এর মাধ্যমে খামারিদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের ব্যবস্থা করছি এবং আরো ব্যাপকভাবে এর প্রসারের চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা আশাবাদী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এমন আয়োজন সংগঠিত হবে এবং এসিআই এগ্রিবিজনেস আরো ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করবে” যোগ করেন ড. আনসারী।