
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাছ চাষ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া, এটি এখন আর কেবল সনাতন পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাক্তিগত গণ্ডি পেরিয়ে মাছ চাষ বাণিজ্যিক রুপ পেয়েছে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিও করছে- এটি যেমন তৃপ্তির খবর, জলবায়ু ও আবহাওয়াগত পরিবর্তন, রোগবালাই, সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা ইত্যাদি নানা কারণে মাঝেমধ্যে ছোট-বড় সব ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে হয়। এসব সমস্যায় দরকার পরিপূর্ণ সমাধান। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের কৃষি খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এসিআই অ্যাকোয়াকালচার ডিভিশন বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দেশের উত্তরাঞ্চলে দুটি টেকনিক্যাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
“Complete Solution for Finfish & Catfish Hatchery Management” শীর্ষক অনুষ্ঠান দুটি আয়োজিত হয় বগুড়ার আদমদীঘিতে এবং রাজশাহীতে। বগুড়ায় আদমদিঘীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল -এর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে প্রায় ৮০ জন হ্যাচারি মালিক এবং রাজশাহীর অনুষ্ঠানটিতে ৩৫জন অ্যাকোয়া কনসালট্যান্ট অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানগুলোতে মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন এসিআই অ্যাকোয়াকালচার -এর পোর্টফোলিও হেড কৃষিবিদ মেহেদী ইসলাম। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসিআই এ্যানিম্যাল হেলথ -এর বিজনেস ম্যানেজার ডা. মঈনুল ইসলাম এবং ডিজিএম রফিক আহমেদ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।

অনুষ্ঠানগুলোতে মূলত মাছ চাষের রোগবালাইসহ ব্যবস্থাপনাজনিত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান; নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এসিআই অ্যাকোয়াকালচার -এর Acilina, Liquavit Aqua, Ovuhom (Powder & Liquid), Renu Gold, Nutri-Egg নামক ৫টি পণ্যের গুণগত মান, বৈশিষ্ট ও প্রায়োগিক দিক ছাড়াও মাছ চাষের খুঁটিনাটি দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল এসিআই কর্তৃক মৎস্য চাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানগুলোর প্রশংসা করেন এবং মৎস্য শিল্পে স্মার্ট অ্যাকুয়াকালচার বিপণনকে সমর্থন করেন।
অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ মেহেদী ইসলাম বলেন, মানুষের মতো মাছেরও রোগবালাই হয় এবং সেই রোগবালাইগুলো নিরাময়ের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয়। মাছের ওষুধ যারা নিতে আসে অর্থাৎ আমাদের খামারী ভাইয়েরা অনেকটা ধীরস্থির সরল এবং তারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে, এমনকি আমরা (বিশেষজ্ঞরা) যাই বলি তারা অনেকটা কখনো-সখানো অন্ধের মতো শুনেন। সুতরাং তারা আমাদেরকে যে বিশ্বাসটা করে, সেই বিশ্বাসকে আমাদের সম্মান দিতে হবে। সমাধান হিসেবে তাদেরকে শুধু ওষুধ দিলেই হবে না, বরং আমাদের এমন কিছু করা উচিত যাতে খামারি তথা সেক্টরের উপকার হয়। তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, এফসিআর উন্নয়ন, নতুন কিছু ইনোভেটিভ আইডিয়া ও মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার সঠিক গাইডলাইন দিতে হবে। কারণ, দিনশেষে আমাদের খামারিরা যদি বেঁচে না থাকেন তাহলে আমাদের সেক্টরে উন্নয়ন কখনোই হবে না।

মেহেদী ইসলাম বলেন, শুধু প্রযুক্তি থাকলেই হবে না, সেগুলো খামারিদের নিকট নিয়ে যেতে হবে। নয়তো সেগুলোর মূল্য থাকে না। সবসময় ইনোভেটিভ টেকনোলজিতে বিশ্বাস করে এবং সেগুলো প্রান্তিক খামারিদের কাছে পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করে। এ সময় হ্যাচারি মালিকদের কাছেও যদি কোন আইডিয়া বা ইনোভেশন থাকে সেগুলো এসিআই -এর সাথে শেয়ার করার অনুরোধ করেন এবং উপস্থিত অতিথিদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আলোচনার আহ্বান করেন।
তিনি বলেন, আমাদেরকে এখন স্মার্ট অ্যাকোয়াকালচার-এর দিকে যেতে হবে। কারণ, আমাদের ভার্টিক্যাল সম্প্রসারনে যেতে হবে এবং ভার্টিক্যাল সম্প্রসারনের জন্য স্মার্ট অ্যাকোয়াকালচারের বিকল্প নেই। যেহেতু আমাদের দেশে মাছ চাষ কেবল ব্যাক্তিগত চাহিদার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, আমরা মাছ চাষকে বাণিজ্যিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছি; তাই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তির বিকল্প নেই।
মেহেদী ইসলাম আরো বলেন, সারাদেশে আমাদের প্রায় ৩০ জন মৎস্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত যে প্রযুক্তিগুলো নিয়ে আসি সেগুলো প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তারা খামারিদের প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমাদের বিশেষজ্ঞদের নিকট ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ; ডিজলভড অক্সিজেন, পিএইচ, অ্যামোনিয়া টেস্ট কীট সবসময় থাকে; তারা সবসময় মৎস্য চাষিদের সেবায় এসব প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করেন। আমরা জানি যে কোন সমস্যার যদি মূল কারণ অনুধাবন করা যায় তাহলে সেটি সমাধান সহজ হয়। আমাদের মৎস্য বিশেষজ্ঞগণ যেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন তা অতীব কার্যকরী ও চাষিবান্ধব।
“উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এবং প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের সর্বদাই নব নব উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকতে হবে। এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখে মৎস্য চাষি ভাইদের সেবায় ‘রূপালী’ নামক একটি অ্যাপ চালু করেছি। গুগল প্লে স্টোর থেকে এটি যে কেউ ডাউনলোড করতে পারবেন। অ্যাপটিতে মাছ চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী করতে হবে তা সুনির্দিস্টভাবে উল্লেখ আছে“ যোগ করেন মেহেদী ইসলাম ।