নিজস্ব প্রতিবেদক: পশু খাদ্য তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতিতে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করাতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ এবং এমবিএম (মিট অ্যান্ড বোনমিল) আমদানির অনুমতি চায় (বিডিএফএ) বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশন। একইসাথে সংগঠনটি সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতি বন্ধের দাবী করেছে।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবী করেন। এ সময় তিনি বিডিএফএ-এর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে মোট ৭টি দাবী উত্থাপন করেন যার মধ্যে প্রথম এবং অন্যতম দাবী ছিল সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ এবং এমবিএম আমদানি আবার শুরুর বিষয়ে।
“আমরা দেখেছি বাণিজ্য উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশের শিল্প ও কৃষি স্বার্থ রক্ষায় দেশের সরকার আমদানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যের ওপর নানা ধরনের শুল্ক আরোপ করার মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করে থাকে। এমনকি অনেক সময় রপ্তানিও বন্ধ করে দেয়।
ভারতেও অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি হলে চাউল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়; অথচ আমাদের দেশে শিল্পের স্বার্থে রপ্তানি উন্মুক্ত করে দিয়ে কার্যত দেশীয় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ফিড উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অতিস্বত্তর সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ করে দেশী শিল্পকে রক্ষার জন্য আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি” -যোগ করেন বিডিএফ সভাপতি।
মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, সয়াবিন মিল রপ্তানি হবে এমন খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম দফায় দফায় কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি করেছে ফলে পশু খাদ্যের মধ্যে শুধু সয়াবিন মিল নয় অন্যান্য সকল পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র সয়াবিন মিল রপ্তানির কারণে গত ৩ মাসে পশু খাদ্যের মূল্য প্রায় ২০% উপরে বৃদ্ধি পেয়েছে যার প্রভাবে মাংসের দাম আজকে ঊর্ধ্বগতি এবং দুগ্ধ খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ -৫০ টাঁকা।
বর্তমানে বাংলাদেশের সকল ফিডমিল গুলোর চাহিদা মেটানোর জন্য ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান হতে এবং অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমদানির করা হয়।
“জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার, প্রাণিজ খাদ্যের প্রোটিন উপকরণ “মিট এন্ড বোন মিল”আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করায় আমাদের ফিডমিলগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে সয়াবিন মিলের ওপর নির্ভর করছে। যেখানে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ফিডমিলগুলো সয়াবিনমিল প্রতিনিয়ত আমদানি করে আসছে সেখানে সয়ামিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই আমরা মনে করি, সয়াবিন রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এমবিএম আমদানি আবার শুরু করা হোক” -উল্লেখ করেন মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশন -এর পক্ষ থেকে আরো ৬ টি দাবী হলো-
১. খামার ও খুচরা পর্যায় তরল দুধের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং বাজারজাতকরন নিশ্চিত করতে হবে- বিগত ১০ বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৮% বৃদ্ধি হলেও খামারীদের তরল দুধের দাম বাড়েনি একটাকাও। মিল্কভিটা প্রতিষ্ঠান সহ দেশের প্রাইভেট অন্যান্য সংস্থা ৩২ থেকে ৪২ টাকা লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকে।
অথচ দুধের উৎপাদন খরচই হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা এলাকাভেদে। এমত অবস্থায় সরকার থেকে খামারিদের তরল দুধের মূল্যের উপর ভূর্তূকি অথবা ন্যায্যমূল্য নির্ধারন করার আকুল আবেদন করছি।
২. হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পকে বাস্তব রূপ দিয়েছে এদেশের হাজারো যুবক । দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু ও হাঁসমুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন ও রোগ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দশকে মাংসের উৎপাদন প্রায় ৭ গুন, দুধের উৎপাদন ৪.৬৭ গুন এবং ডিমের উৎপাদন প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাংস বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ৭৬.৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন, দুধ বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ১০৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন ও ডিম বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ১৭৩৬ কোটি। জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম মাংস এবং সপ্তাহে ২টি ডিম সরবরাহে আমরা ইতিমধ্যেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। দুধে জনপ্রতি প্রাপ্যতা ১৭৫ মিলিতে উন্নিত হয়েছে। এই সকল অর্জন সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য।
৩. পশুখাদ্যর মূল্য নিয়ন্ত্রনে উপজেলা পর্যায়ে টিসিবি’র মাধ্যমে পশুখাদ্য পোঁছে দিতে হবে।
৪. পশুখাদ্য ব্যাবসায়ি সিন্ডিকেশন বন্ধ করে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে ।
৫. জরুরী শিশু খাদ্য নয় বরং বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামে নিম্ন মানের গুড় দুধ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। ফর্মুলা মিল্কের উপর আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার করে সুলভ মূল্য শিশু খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
৬. দুগ্ধ ও মাংস খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বানিজ্যিক বিলের আওতায় থাকার কারনে দুগ্ধ ও মাংসের উৎপাদন খরচ অত্যাধিক। যেখানে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো ভূর্তকীর মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে বাচিয়ে রাখার চেস্টা করে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিল এবং পানির বিল কৃষির আওতায় আনার দাবী মোটেই অযৌক্তিক নয়।