নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। চালের দাম এখন স্থিতিশীল রয়েছে। মোটা চালের দাম মোটেও বাড়েনি। ভাত নিয়ে কোন কষ্ট হবে না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য যেন সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকে।
শনিবার (১২ মার্চ ২০২২) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর সদর দপ্তরে ৩৬তম এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নেয়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্রি এবং বারির ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী, কর্মকর্তাদের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় এফএও এর মহাপরিচালক চু দোয়াংয়ু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, ব্রির মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার। সভায় উপস্থিত ছিলেন এফএও এর সহকারী মহাপরিচালক জং-জিন কিম, প্রধান অর্থনীতিবিদ মেক্সিমো টরিরো কুলেন এবং এফএও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন।
সভায় ব্রির কার্যক্রম, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ব্রির গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যেখানে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনায় বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করেছে। এ সময় তিনি কৃষি কার্যক্রম জোরদারে এফএও এবং বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে দুপুরে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এবং এফএও এর মহাপরিচালক চু দোয়াংয়ু এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ব্রি সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান ব্রির মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর, ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো: আবু বকর ছিদ্দিক, পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। প্রথমেই কৃষিমন্ত্রী, এফএও এর মহাপরিচালক, কৃষি সচিব, ব্রির মহাপরিচালক এফএও এর প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে অতিথিবৃন্দ বঙ্গবন্ধু চত্বরে গাছের চারা রোপণ করেন। এর পর অতিথিবৃন্দ ব্রি রাইস মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। মিউজিয়ামে বাংলাদেশের ধানভিত্তিক ইতিহাস ঐতিহ্য ও ব্রির গবেষণা অর্জনগুলো ব্রিফ করেন কর্মসূচিটির পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মোমিন।
পরে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এবং এফএও এর মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক এবং কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে এফএও কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে সেসব বিষয়ে এফএও এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এফএও বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আমরা মনে করি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারের সংকট বা ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত আছে। সুতরাং দাম বাড়ার কোন কারণই নেই। এ সময়ে এফএও এর মহাপরিচালক সাংবাদিকদের কাছে তার বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পরে অতিথিবৃন্দ ব্রির বিভিন্ন গবেষণা বিভাগের স্টল পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দ ব্রির পশ্চিম বাইদে গবেষণা মাঠপরিদর্শন করেন এবং ব্রির সামগ্রিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।