চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বেশ কিছু দিন ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে কিছু অসাধু ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে অস্থিরতায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনায় বাজারে গেলেই দোকান-পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। গত বুধবার দেশের বৃহৎ পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের ডিও ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় মার্কেট ‘সোনা মিয়া মার্কেটে’ এ ঘটনা ঘটে। বেশকিছু বাজারে প্রতিবারই অভিযান পরিচালিত হলেই ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। অভিযান পরিচালনাকালে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে চলে যাবার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাজার তদারকিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের জন্য দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ উপরোক্ত দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা পরবর্তী সময় থেকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি করে বাজারে আগুন ধরাচ্ছেন। যার কারণে চালের দাম দীর্ঘ দুই বছর ধরেই অস্থির। এসুযোগে ব্যবসায়ীরা একবার আলু, একবার পেয়াঁজ, একবার ডাল, আটা-ময়দা এভাবে প্রতিটি পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধের পরিবর্তে এ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ডকে বৈধতা প্রদানে সাধারন মানুষের ওপর নানা অভিযোগ তুলছেন। অধিকন্তু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানের জন্য তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসহ নানা পদে আসীন করছেন। এমনকি তারা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বৈদশিক সফরসঙ্গী করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ অবস্থায় পুরো দেশটি যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা হাটে পরিনত হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়েনি এমন পণ্যের তালিকা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বড় বড় আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে অভিযান পরিচালনা না করার জন্য প্রছন্ন হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। আবার কোন সময় অভিযান পরিচালনা করা হলে দোকান-পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। তারা যদি কোন অপরাধে বা কারসাজিতে জড়িত না হন তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালানোর দরকার কী?
নেতৃবৃন্দ বলেন পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে মূল্য ছাড় শুরু হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পুজার সময় মূল্যহ্রাস হলেও আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। রমজান ও ঈদের সময় যেন ভোক্তার পকেট কাটার উৎসব। ব্যবসায়ীরা “রমজানে একমাস ব্যবসা করবে ১১ মাস বসে থাকবে” এই নীতি গ্রহণ করেছেন। অনেকে আবার কালোটাকা সাদা করার মতো, পুরো রমজানে মানুষের পকেট কেটে, গুনাহ মাফের জন্য রমজানে শেষ ১০দিন মক্কায় এতেকাফের উদ্দেশ্যে ওমরা করতে চলে যান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভোক্তা সংরক্ষন আইন ২০০৯ অনুযায়ী সব দোকানে মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করছেন না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজার থেকে চলে গেলেই মূল্য তালিকা উদাও হচ্ছে। প্রতিবার বাজার অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালতের সময় এ জন্য জরিমানা করা হলেও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। এ অবস্থায় গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে বর্জনের আহবান জানান।