নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জ জেলায় প্রতিবছর আগাম বন্যায় ফসল রক্ষা বাধঁ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে অগ্রীম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ২০১৭ সাল হতে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে । গত ১ এপ্রিল হতে ৬ এপ্রিল সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয় যা তিন দিনে ১২০৯ মি:মি: রেকর্ড করা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হয়েছে; যেখানে বছরের মোট বৃষ্টিপাত ৫ হাজার মি:মি: পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টির পানি ও ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি এসে সুনামগঞ্জে জমা হয়। হাওরের এবং এর নদী/খালে এতো পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই। প্রতিবছর উজান হতে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন পলি আমাদের দেশে চলে এসে জমা হয়। ফলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে নদী/খালে পানি ধারন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে । ড্রেজিং করে এসব নদী/খাল রক্ষা করার কাজ চলমান।
সোমবার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে হাওরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক । সংবাদ সম্মেলনে উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বক্তব্য রাখেন।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন; সুনামগঞ্জ হাওরে মোট ১হাজার ৭শ ১৮ কি:মি: বাধঁ রয়েছে এর মধ্যে ৫শ৩৫ কি:মি: বাধেঁর কাজ ড্রোনের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে যাচাই বাছাই ও মনিটরিং করা হয়েছে। সাম্প্রতি বন্যায় হাওরের ৩টি স্থানে ১৭০ মিটার বাধঁ ভেঙ্গে গেছে, দুটি স্থানের বার্ধেঁর মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য হাওরে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। আগাম বন্যার জন্য সব সময় মনিটরিং ও প্রস্তুতি নেয়া হয়ে থাকে। হাওরের পানি জমে থাকার কারণে ডিসেম্বরে সব যায়গাতে কাজ শুরু করা যায়নি। ডিসেম্বরের স্থলে জানুয়ারিতে কাজ শুরু হলে বার্ধেঁর কাজ শেষে ঘাষ বপনের আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। বাধেঁর কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
জাহিদ ফারুক বলেন; দেশে ৭টি হাওর জেলার ৩শ৭৩ টি হাওরের মধ্যে সুনামগঞ্জে সর্বাধিক হাওর রয়েছে। এবছর জেলায় মোট ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল চাষ করা হয়েছে। আকষ্মিক বন্যায় হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে হাওরের বাধেঁ ১৩৬ টি স্থানে সিপেজ এর সৃষ্টি হয়েছে;এর মধ্যে ৮৮টি সম্পুর্ণ মেরামত করা হয়েছে ৩৮ টির কাজ চলমান রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী ৬৪টি জেলায় নদী খননের লক্ষ্যে ৫১১ টি নদীর যায়গায় ৬২৭ টি ছোট নদী/খাল খনন কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ জেলার জন্য ১৫শ ৪৭ কোটি টাকার ১৪ নদী খনন একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যার দৈর্ঘ ৩শ২৭ কি:মি:; সংযুক্ত খাল ২শ৫০কি:মি: । নভেম্বরে একনেকে পাশ হলে ২০২৩ সালে কাজ শুরু হবে। ৯০টি কজওয়ে প্রকল্পও রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পক্রিয়াধীন। সুনামগঞ্জ হাওরের ১৪ টি নদীতে পানি ধারণ ক্ষমা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন কাজ চলমান রয়েছে; ইতোমধ্যে ৫টি জেলার নদীর ৩শ ৭৪ কি:মি: খনন চলমান। গ্রামবাসি বোরো ধান কাটা শেষ হলে কৃষকরা বাধঁ কেটে দেয় মাছ চাষের পানি প্রবেশের জন্য ফলে বাধঁগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় মানবতার মন্ত্রণালয়। মানবতার পাশে আছে এই মন্ত্রণালয়। আকষ্মিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। আপতকালিন সময় সুনামগঞ্জ জেলার ১১ টি উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং ১১ টি টিম করা হয়েছে। বর্তমান সরকার তথা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমা বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে আগে বছরে ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমি নদীগর্বে বিলিন হতো এখন তা কমে ৩ হাজার ৫শ হেক্টর হয়েছে। আমাদের যে দায়িত্ব তা পালনের চেষ্টা আমরা করছি। কারো কোনো গাফিলতি পেলে কোনো ক্ষমা নয়।
দুর্নীতি অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ । হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ফসলহানির ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিন এর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য নগদ অর্থসহ কৃষিঋণ মওকুফ সহ যা যা করা দরকার তা করা হবে,কৃষি মন্ত্রণালয় হতে সহায়তা করা হবে বলে জানান এনামুল হক শামীম।
সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন; হাওরের কোনো কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয় না । পিআইসি কমিটির মাধ্যমে কাজ করা হয়। ৭টি জেলায় হাওরে মোট ২ হাজার ৬শ ১৮ কি:মি: ডুবন্ত বাধঁ রয়েছে। ৭শ২৭ টি পিআইসির মধ্যে ৪ টি পিআইসির সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের হার ৯৯ শতাংশ। কোথাও দেরিতে কাজ শুরু করা হয়না; পানি নেমে না গেলে কাজ করা যায় না।তবে কাজ সময়মত শেষ হয়েছে। তাহিরপুরে একটি বাধঁ ভেঙ্গে গেছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয় সেটি স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে।
এ সময় সিনিয়র সচিব জনগণের নিকট প্রকৃত তথ্য উপাত্তসহ সংবাদ উপস্থাপনের জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।