বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন ধানের জাত সনাক্ত করেছে গবেষকরা

হাইলাইট

  • গবেষকরা নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষকের মাঠে “হেড টু হেড অন-ফার্ম অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল” পরিচালনা করেছেন।
  • এর মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন ধানের জাত সনাক্ত করা হয়েছে।

ধান বিজ্ঞানীরা নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষকের মাঠে সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন অনেকগুলো ধানের জাত সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জাতের ফলনের তুলনা ও নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমন এবং বোরো উভয় মৌসুমেই সেরা ফলন দেয়া ধানের জাত সনাক্ত করেছেন তাঁরা। এই জাতগুলো সারাদেশে সম্প্রসারণ করা গেলে চাষীদের উৎপাদন এবং মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন চাল উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। হেড টু হেড অন-ফার্ম অ্যাডাপটিভ ট্রায়ালে গবেষকরা দেখেছেন, বর্তমানে ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯৬ এবং ব্রি ধান৯২ বোরো মৌসুমের সেরা ফলন প্রদানকারী ধানের জাত। রোপা আমান মৌসুমে, আইআর১৩এফ৪৪১ এবং ব্রি ধান৭৯ আকস্মিক বন্যা-প্রবণ পরিবেশের কার্যকরি জাত। এছাড়াও, ভারতীয় ধানের জাত স্বর্ণার বিকল্প হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪ এবং ব্রি ধান৯৫ সবচেয়ে জনপ্রিয় তবে মাঠ পর্যায়ে আমনের সর্বোচ্চ ফলন প্রদানকারী জাত হচ্ছে ব্রি ধান৮৭। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং ব্রি কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় গবেষণালদ্ধ এসব ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

বিগত তিন বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হেড টু হেড অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল (এইচএইচএটি) পরিচালনা করার পর গবেষকরা এই ধানের জাতগুলি চিহ্নিত করেছেন। তারা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিমাণগত ডেটা তৈরির মাধ্যমে জনপ্রিয় পুরানো মেগা জাতের তুলনায় নতুন উদ্ভাবিত জাতের উৎপাদনশীলতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইচএইচএটি ট্রায়াল পরিচালনা করেন। এই ট্রায়ালে নতুন-উদ্ভাবিত উফশী জাত, আগে চাষকৃত বেঞ্চমার্ক জাত এবং কৃষক-পর্যায়ের স্থানীয় জাতগুলির উৎপাদনশীলতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একমাঠে একত্রে চাষ করে উল্লিখিত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও গবেষণাটির মাধ্যমে বিভিন্ন সম্ভবনাময় জাত এবং জাতগুলির বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ট্রায়ালে গবেষকরা কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণকর্মীদের কাছ থেকে এসব জাত সম্পর্কে মতামত সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, এই ট্রায়াল কৃষকের মাঝে কৌতূহল, জ্ঞান এবং নতুন জাতের কার্যকরি চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, গত বোরো মৌসুমে উফশী জাতের মধ্যে সর্বনিম্ন ফলন দিয়েছে ব্রি ধান২৮ এবং জাতটিতে বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের প্রকোপও ছিল বেশি। তাই এই জাতটিকে অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করা উচিত বলে মনে করেন ধানবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মীরা। এছাড়াও, ব্রি ধান২৯ এবং ব্রি ধান৮৯-এর ফলন প্রায় সমান হয়েছে। তবে, কিছু কিছু জায়গায় ব্রি ধান২৯ নেক ব্লাস্ট রোগ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল।

গবেষণাটির ব্রি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ড. মো. হুমায়ুন কবির, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, ফলিত গবেষণা বিভাগ, ব্রি এবং ইরি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইরি’র বিজ্ঞানী এবং সাউথ এশিয়া– সিড সিস্টেম এন্ড প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড- ড. স্বাতী নায়েক।

ইরি’র বিজ্ঞানী এবং সাউথ এশিয়া সিড সিস্টেম এন্ড প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড- ড. স্বাতী নায়েক বলেন “এই ধরনের অন-ফার্ম ট্রায়াল আমাদের পুরনো জাতগুলোর তুলনায় নতুন জাত কতটা বেশি ফলনশীল সে বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। নতুন উদ্ভাবিত ও অবমুক্তকৃত ধানের জাতগুলি যে সকল অঞ্চলে চাষ করা হবে, সে সকল অঞ্চলের পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হচ্ছে। আমাদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাতগুলো যথেষ্ট উন্নত কিনা অথবা কৃষক ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য জাতগুলির আরো উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে কিনা সেসকল বিষয় সম্পর্কেও জানা গেছে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডঃ মোঃ শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, “দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য যে পরিবেশের জন্য যে উফশী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি সেই অঞ্চলেই চাষাবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সম্প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই জাতগুলিকে কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করা এবং যাতে তাদের সার্বিক উৎপাদন এবং মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে”।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রির পরিচালক গবেষণা ডঃ মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক, এবং ইরি-এর প্রজেক্ট লিড ডঃ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইরি, ব্রি, বিএডিসি, বিনা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, আরডিএ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি)

https://www.irri.org/

ইরি চাল-ভিত্তিক কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল মানুষ এবং জনসংখ্যার মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য নিবেদিত। আমাদের কাজ এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, ইরি ধান চাষি এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ উন্নত করার লক্ষ্য রাখে; জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বে পরিবেশগত উন্নয়নে কাজ করা; এবং চাল শিল্পে নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সিজিআইআর-এর সদস্য, যা বিশ্বের বৃহত্তম কৃষি গবেষণা অংশীদার এবং একটি খাদ্য-সুরক্ষিত ভবিষ্যতের তৈরির জন্য নিবেদিত।

আরো তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করুন: আজিজুর রহমান অনীক, স্পেসালিস্ট-কমিউনিকেশন-যোগাযোগ: ই-মেইল a.anik@irri.org, মোবাইল: ০১৭৬৮১০০৭৬১।

This post has already been read 3485 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …