নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল আগাম (মে-জুন বা জ্যৈষ্ঠ) জাত। গাছ খাড়া প্রকৃতির ও মধ্যম ঝোপালো। গাছ প্রতি ১২৫ টি ফল ধরে যার ওজন ১১৮১ কেজি। ফল মাঝারী (৯.৫ কেজি) ও ডিম্বাকৃতির। শাঁস মধ্যম নরম, খুব রসালো এবং খুব মিষ্টি (ব্রিক্সমান ২২%)। খাদ্যোপযোগী অংশ ৫৫%।
উপযোগী এলাকা : বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষযোগ্য।
বপনের সময় : চারা বা কলম রোপণের সময় মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ (জুন-আগস্ট) মাস। ভাদ্র-আশ্বিন (সেন্টেম্বর) মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় চারা/কলম রোপণ না করাই ভাল।
সার ব্যবস্থাপনা
বারি কাঁঠাল-১
|
গাছের বয়স(বছর) | ||||
১–৩ | ৪–৬ | ৭–১০ | ১১–১৫ | ১৫ বছরের উর্দ্ধে | |
জৈব সার(কেজি) | ২০ | ২৫ | ৩০ | ৪০ | ৪০-৫০ |
ইউরিয়া (গ্রাম) | ৪০০ | ৬০০ | ৮০০ | ১০০০ | ১২০০ |
টিএসপি (গ্রাম) | ৪০০ | ৫৫০ | ৭০০ | ৯০০ | ১৬০০ |
এমওপি(গ্রাম) | ৩৫০ | ৪৫০ | ৫৫০ | ৬৫০ | ১২৫০ |
জিপসাম (গ্রাম) | ৮০ | ১০০ | ১৩০ | ১৬০ |
মাড়াইয়ের সময়: আগাম (মে-জুন বা জ্যৈষ্ঠ)
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা
রোগবালাই:
নরম পচা রোগঃ রাইজোপাস আরটোকারপাস নামক ছত্রাকের আক্রমণে কচি ফলের (সত্রী পুস্প মঞ্জুরী) গায়ে বাদামি রংয়ের দাগের সৃষ্টি হয় এবং ছোট অবস্থাতেই ফল ঝড়ে পড়ে। পুরুষ পুস্প মঞ্জুরী পরাগায়ন শেষে স্বাভাবিকভাবেই কালো হয়ে ঝরে পড়ে।
ফল পচা রোগঃ এটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের আক্রমণে পরিপক্ক ফলের গায়ে বাদামি রংয়ের দাগ পরে এবং পরবর্তী কালে ফল পচে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
গামেসিসঃ এ রোগের প্রভাবে গাছের বাকলে ফাটল ধরে ও সে স্থান থেকে অবিরত রস ঝরে। কাঠ বেরিয়ে আসে, ক্ষতস্থানে গর্ত হতে থাকে ও পচন ধরে। চারা গাছ সংবেদনশীল বিধায় ধীরেধীরে মারা যায়।
ফল ফেটে যায়ঃ ফলের বৃদ্ধিকালে দীর্ঘ শুষ্কতা বা পানির কমতি হলে ফলের ত্বক শক্ত হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ অধিক বৃষ্টি বা পানি পেলে ফলের ভিতরের অংশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এতে ভেতরের চাপ সহ্য করতে না পেরে ফল ফেটে যায়। জাতগত বৈশিষ্ট্যের (খাজা কাঁঠাল) জন্য নাবী মৌসুমে ফল ফাটে। এছাড়া অতি পক্কতার জন্যও ফল ফাটতে পারে।
ফলের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ঃ ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হওয়াকে ভিভিপেরি জার্মিনেশন বলে। জাতগত বৈশিষ্ট্যের কারণে, হরমোনের অভাবজনিত কারণে এবং উচ্চ আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ভিভিপেরি জার্মিনেশন হয়।
দমন ব্যবস্থা
নরম পচা রোগ প্রতিকারঃ গাছের নীচে ঝরে পড়া পুরুষ ও সত্রী পুস্প মঞ্জুরী সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার ব্যাভিস্টিন/ইন্ডোফিল এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ফলিকুর নামক ছত্রাক নাশক ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫/রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ফুল আসার পর হতে ১৫ দিন অমতর অমতর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফল পচা রোগ প্রতিকারঃ ফলের রোগের লক্ষণ দেয়ার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ২ বার বর্দোমিক্সার (১%) বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ (০.২%) স্প্রে করতে হবে।
গামেসিস প্রতিকারঃ ক্ষতস্থান বাটাল বা ধারালো ছুরী দিয়ে চেছে (স্কুপিং) উক্তস্থানে বর্দোপেস্ট/আলকাতরা লেপন করতে হবে। প্রথমবার দেয়ার পর পরবর্তী দু’মাসে আরো দু’বার লেপন করা প্রয়োজন।
ফল ফেটে যায় প্রতিকারঃ ফলের বৃদ্ধি পর্যায়ে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। মালচিং করতে হবে। সঠিক পরিপক্ক অবস্থায় ফল সংগ্রহ করতে হবে। বর্ষার শেষে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম হারে বরিক এসিড অথবা ১০০ গ্রাম হারে বোরাক্স সার প্রয়োগ করতে হবে।
ফলের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয় প্রতিকারঃ ভিভিপেরি জার্মিনেশন হয় না এরূপ জাত উদ্ভাবন ও রোপণ করতে হবে
পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা
পোকামাকড়
কান্ড ছিদ্রকারী পোকাঃ কান্ড ছিদ্রকারী পোকা কাঁঠালের অন্যতম প্রধান শত্রু। এ পোকার কীড়া কান্ড ছিদ্র করে গাছের অভ্যন্তরে ঢুকে এবং কান্ডের কেন্দ্র বরাবর খেতে খেতে উপরের দিকে উঠতে থাকে। সময়মত দমন করা না গেলে আক্রান্ত ডাল বা সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।
ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ এ পোকা কাঁঠালের আর একটি অত্যমত ক্ষতিকর পোকা। এ পোকার কীড়া বাড়ন্ত ফলের গা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে এবং শাঁস খেতে থাকে। আক্রান্ত ফল বেঁকে বা ফেটে যায় এবং বৃষ্টির পানি ঢুকে পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা
কান্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিকারঃ ছিদ্রের ভিতর চিকন রড ঢুকিয়ে পোকার কীড়া মেরে ফেলতে হবে। চিকন রড দিয়ে ছিদ্র পরিস্কার করে এর অভ্যন্তরে কেরোসিন, পেট্রোল বা উদ্বায়ী কীটনাশক সিরিঞ্জের মাধ্যমে ঢুকিয়ে কাদা বা মোম দিয়ে ছিদ্রপথ বন্ধ করে দিলে অভ্যন্তরে ধুয়া সৃষ্টি হয় এবং পোকা মারা যায়।
ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিকারঃ আক্রান্ত পুষ্প মঞ্জরী ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বাগান সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ন্ত ফল নিচের দিকে খোলা পলিথিনের ব্যাগ দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। ফুল আসার সময় সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. হারে মিশিয়ে ১০ দিন অমতর ২/৩ বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
সূত্র: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।