নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতের সুপরিচিত কোম্পানি সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিমিটেড -এর উদ্যোগে “Impact of the Pharmaceutical Formulations in Successful Treatments” কারিগরী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৫ মে) ঢাকার উত্তরাস্থ এক অভিজাত হোটেলে উক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা, কনসালট্যান্ট ও সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন।
আগত অতিথিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের পর রোমানিয়ার বিখ্যাত কোম্পানী ডেলোস মেডিকা -এর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ডা. আলেক্সান্দ্রু বাসিউ (Dr. Alexandru Baciu, DVM, Technical Director, Delos Medica, Romania) কে সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের আমন্ত্রণ জানান সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান।
Dr. Alexandru মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের আগে Delos Medica কোম্পানি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। তিনি জানান, Delos Medica বিশ্বের ১৪টিরও বেশি দেশে এর পণ্য সরবরাহ করে আসছে। এরপর তিনি উক্ত কোম্পানির Bromex(Enrofloxacin 20%+Bromhexin 1.5%) Florfenidem 10 (Florphenicol 10%), Tilmicodem 25 ( Tilmicosin 25%) নামক তিনটি পণ্যের বিস্তারিত আলোচনা করেন। ডা. সরোয়ার জাহান একই কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত নতুন পণ্য Vermicid 10(Albendazole 10%) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরপর তাঁরা দুজনেই আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের সাবলীল উত্তর প্রদান করেন।
ডা. সরোয়ার জাহান বলেন, দেশের পোলট্রি সেক্টরে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন যে ধরনের রোগবালাইয়ের আবির্ভার ঘটছে সেটিকে মোকাবেলা করার জন্য এ শিল্পে নতুন কিছুর দরকার। পোল্ট্রি ও ডেইরিতে সবচাইতে বেশী ক্ষতিকারক পরজীবী কৃমি দমনে আমরা ডেলোস মেডিকা থেকে Vermicid 10 (Albendazole 10%) নিয়ে এসেছি। এটি এমন একটি কৃমিনাশক যা টেস্টি এবং কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গোলকৃমি, ফিতাকৃমি সহ সব ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে এটি দারুনভাবে কাজ করে। কেউ যদি ভুলেও ওভারডোজ (সর্বোচ্চ ৫ বার) দিয়ে দেয়, তবুও কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। সময়ের সাথে প্রযুক্তিগত ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে প্রস্তুতকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল ফরমুলেশন সঠিক চিকিৎসায় সুফল বয়ে আনবে। পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারে এমন পণ্য ব্যবহারে ভেটেরিনারিয়ান এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা উচিত যেগুলো ব্যবহারে খামারের রোগ বালাই ও কৃমি দমনে অধিক কার্য্যকর, পরিবেশ বান্ধব, স্বাশ্রয়ী, ডিমের উৎপাদন ও দৈহিক ওজনে সমস্যা হবে না। আমরা এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে সবচাইতে উত্তম ও সময়োপযোগী মেডিসিন আমদানি করি যা ইতিমধ্যে সারা দেশে ভেটেরিনারিয়ান এবং খামার মালিকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক (প্রশাসন) ও ডায়মন্ড এগ গ্রুপের উপদেষ্টা ডা. এ.কে.এম আতাউর রহমান বলেন, দেশের পোলট্রি শিল্পে এখন চরম দুর্যোগ চলছে। ফিডের দাম বেড়ে যাওয়াতে খামারিরা বিপদে আছেন। এদেশে সারে ভর্তুকি দেয়া হয়; কিন্তু বর্তমানে পোলট্রি শিল্পের যে অবস্থা তাতে করে এ সেক্টরেও ভর্তুকি দেয়া উচিত। কিন্তু আমরা বিষয়টি সরকারের কানে সেভাবে পৌঁছাতে পারিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পের গোড়াপত্তন যে গাজীপুরে হয়েছিল সেখানে খামারের সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। দেশের পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাতে হলে গাজীপুরকে বাঁচাতে হবে। সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস্ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকও গুনগত মান সম্পন্ন প্রোডাক্টস্ ও তার অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও যোগ করে বলেন সেমিনারের সময় আরও বর্ধিত করে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল প্রেজেন্টেশন দেওয়া দরকার যাতে করে আমরা আরও নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারি।
গাজীপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন বলেন, সবার আগে দেশের প্রান্তিক খামারিদের ধরে রাখতে হবে। তাদেরকে ধরে রাখতে হলে ভালো ওষুধ সরবরাহ করতে হবে, যেটি ভালো সেটি ব্যবহার করতে হবে। এ সময় তিনি উপস্থিত ভেটেরিনারিয়ানদের খামারিদের প্রতি আরো বেশি আত্মনিয়োগের অনুরোধ করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পিএসও ডা.অখিল চন্দ্র বলেন, দেশের পোলট্রি সেক্টর এখন অভিভাবকহীনভাবে চলছে। পোলট্রি শিল্প না থাকলে ভেটেরিনারিয়ানদের এত কর্মসংস্থান হতো না। এ শিল্প না থাকলে মানুষের পুষ্টি চাহিদা হুমকির মুখে পড়বে। পোলট্রি সেক্টরে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিচ্ছে। খামার ধ্বংস হতে রোগবালাই একটি বড় বিষয়। তাই এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ -এর সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মো. মহসিন বলেন, দেশের প্রান্তিক খামারিদের সবাই শোষণ করে। অনেক ভুল প্র্যাকটিস ছোট খামারিদের নিঃস্ব করে ফেলে। ফার্মগুলো এন্টিবায়োটিক মুক্ত ডিম ও মাংস উৎপাদন করতে পারে তাদেরকে সে পথ বাতলে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ভেটেরিনারিয়ান পেশায় যারা আছেন তারা ইচ্ছে করলেই খামারিদের অনেক ক্ষেত্রে বাঁচাতে পারেন। এ সময় তিনি প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে সবার প্রতি আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
সবশেষে ডা. মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান আগত অতিথীদের সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার জন্য সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস্ লিঃ এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।