ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনায় বেসরকারি বন্ধ পাটকল চালু ও শ্রমিকদের চুড়ান্ত পাওনাসহ ৬ দফা দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১ জুন) সকাল ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বেসরকারী পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার (২ জুন) শিরোমনি মহসেন জুট মিল সংলগ্ন ফেডারেশনের অস্থায়ি কার্যালয়ে বিকাল ৪ টায় মতবিনিময় সভা ও ৩ জুন ফুলবাড়ীগেট জনতা মার্কেট চত্বরে শ্রমিক জনসভা। এর মধ্যে শ্রমিকদের দাবি পুরণ না করা হলে শ্রমিক জনসভা থেকে রাজপথ, রেলপথ অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খুলনার আটরা ও মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার বন্দকৃত মহসেন, এ্যাজাক্স, সোনালি জুট স্পিনার্স, আফিল ও শিরোমনি হুগলি বিস্কুট কোম্পানিসহ বন্ধ সকল জুট মিল চালু ও চুড়ান্ত পাওনা পরিশোধ ও শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত ৬ দফা দাবি মানতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে শ্রমিক নেতা গোলাম রসুল খান বলেন, খুলনার শিরোমনি শিল্প এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন মহসেন জুট মিলটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও মালিক পক্ষ কৃত্রিম অর্থ সংকট দেখিয়ে মিলটি ২০১৩ সালের ২৩ জুন থেকে ৩৯০ দিন বেআইনী লেঅফ করে। এরপরে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই এক নোটিশে সকল শ্রমিক কর্মচারীদের বেআইনিভাবে ছাটাই করলেও এ পর্যন্ত শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করেনি। বর্তমানে ৩৬৫ জন শ্রমিক কর্মচারীদের মিল মালিকের নিকট সোয়া ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে । এসময় তিনি বিভিন্ন মিলের চিত্র তুলে ধরেন।
আফিল জুট মিল
আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সম্পুর্ণ বেআইনীভাবে বন্ধ করা হয়। শ্রম পরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি পক্ষিয় বৈঠকে ২০২১ সালের মধ্যে শ্রমিকের চুড়ান্ত পাওনা পরিশোধ করার কথা বললেও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মিলের কয়েকজন শ্রমিককে কিছু পাওনা পরিশোধ করে মিল মালিক কতৃপক্ষ।
এ্যাজাক্স জুট মিল
মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার এ্যাজাক্স জুট মিল ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। মিলটিতে প্রায় স্থায়ী-অস্থায়ী ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। বর্তমানে মালিকপক্ষের নিকট প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে শ্রমিক কর্মচারীদের।
জুট স্পিনার্স
শিরোমনি শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিলটি ২০১৬ সালে বন্ধ করা হয়। মিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। শ্রমিক কর্মচারীদের মালিকপক্ষের নিকট প্রায় কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। নতুন করে দৈনিক ভিত্তিকভাবে মিল চালু করার জন্য ইতোমধ্যে মিলের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ।
সোনালী জুট মিল
মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার সোনালী জুট মিল ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে লিজ নিয়ে একেক সময় একেকজন পরিচালনা করতে থাকে । বর্তমানে মেসার্স আমেনা ট্রেডিং মিলটি চালাচ্ছে এবং ৪ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ৪২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে মিল মালিকের নিকট।
হুগলী বিস্কুট কোম্পানি
শিরোমনি শিল্প এলাকার হুগলী বিস্কুট কোম্পানি ২০২১ সালে বন্ধ করা হয়। কারখানাটিতে ১৭০ জন শ্রমিক কাজ করতো। শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ৬০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মিল মালিকরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে সে টাকা অন্যখাতে ব্যয় করে। পূর্বেও শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করে আসছে মালিকপক্ষ। বর্তমান শ্রমিক বান্ধব সরকারের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে মালিকগোষ্ঠি । দেশে বাস করে দেশের আইন অমান্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ অসহায় শ্রমিকের উপর জুলুম নির্যাতনের বিচার ও শাস্তিসহ ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সকল বন্ধ জুট মিলের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শ্রমিকের সকল পাওনাদি অতিদ্রত পরিশোধের দাবি জানান। ঘোষিত ৬ দফা হলো সকল বন্দ মিল চালু, শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনাদী এককালিন পরিশোধ ,আফিল, জুট স্পিনার্স সহ সকল বন্দকৃত জুট মিলে ২০০৬ সালের শ্রম আইন মোতাবেক চুড়ান্ত পাওনা পরিশোধ বাজার দর অনুযায়ি জাতীয় নিম্নতম মুজুরী কমিশন গঠন, মুল মুজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ, শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ২০০৬ সালের শ্রম আইন মোতাবেক বেসরকারী জুট মিল পরিচালনা করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন, আফিল জুট মিলের শ্রমিক নেতা মোঃ নিজামউদ্দিন, জুট স্পিনার্স মিলের শ্রমিক নেতা মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ কালাম, মোঃ আলাউদ্দিন, সোনালী জুট মিলের শ্রমিক নেতা মোঃ লিয়াকত মুন্সি , সেকেন্দার আলী, বাবুল হোসেন, এ্যাজাক্স জুট মিলের শ্রমিক নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম, আঃ ওহাব, সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মোঃ সাইফুল্লাহ তারেক , মহসেন জুট মিলের শ্রমিক নেতা আমির মুন্সি, সাংবাদিক মিহির রজ্ঞন বিশ্বাস, হুগলী বিস্কুট শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ ।