ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার সীতাকুন্ডে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ঘটনায় জরুরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর সংশ্লিষ্ট কাষ্টমস ও বন্দরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্নয় জরুরী সভা ডেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কন্টেইনার বোঝাই জেটির ইয়ার্ডগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা, বন্দরের জেটিতে বোঝাই করা কন্টেইনারের আমদানীকৃত পন্যের তথ্য জানার জন্য কাস্টমসের মাধ্যমে আমদানীকারকদের দ্রুত আহবান জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা এড়াতে ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে নিরাপদে রাখতে চলতি সপ্তাহে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদেন নিয়ে বিশেষ মহড়ারও আয়োজন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সুত্রে জানায়, মোংলা বন্দর সৃষ্টির পর থেকেই জেটি এলাকার ৬টি ইয়ার্ডে রাখা হয় কন্টেইনারজাত পন্য বোঝাই বিভিন্ন ব্র্যান্ডে দেশ-বিদেশ থেকে আসা হাজার হাজার কন্টেইনার। মোংলা সমুদ্র বন্দরের গত ২ জুন বিদেশী পতাকাবাহী এমভি কোটা টেংঙ্গা নামের একটি কন্টেনারবাহী জাহাজ ৮নং জেটিতে নোঙ্গর করে। তা থেকে ওই দিনই আমদানীকৃত বিভিন্ন পন্য বোঝাই ২৩২টি কন্টেইনার খালাস করা হয় বন্দরে এবং মোংলা বন্দর থেকে লোড করা ৮১ কন্টেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে। কিন্ত আমদানীকৃত এ সকল কন্টেইনারে কি ধরনের পন্য আমাদনী বা রপ্তানী করা হয়েছে তা খবর নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে আমদানী-রপ্তানী করা সকল পন্যের তথ্য উপাত্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। যখনই বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস করা হবে তখনই বিদেশ থেকে আমদানীকৃত পন্যে তথ্য দ্রুত যাচাই-বাছাই করে পুর্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার তাগিদ বন্দর চেয়ারম্যানের।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম ডিপুতে ক্যামিকেল বোঝাই কন্টেইনারে বিস্ফোরনে অনেক লোকের প্রানহানী ঘটেছে। নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার আমদানী-রপ্তানীকৃত মালামাল। দুর্ঘটনা ঘটার পর পরই মোংলা বন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের নিজস্ব ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তা বিভাগের সদসদ্যদের জোর তাগিদ দিয়ে তাদের দ্রæত টহল জোরদার করে সার্বক্ষনিক পাহারায় রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আর কন্টেইনার ইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়াও মোংলা বন্দরে মজুদ রাখা কন্টেইনারে বোঝাইকৃত পন্যের তথ্য জানাতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমদানীকারকদের চিঠির মাধ্যমে আহবান করা হয়েছে। যার জন্য কাস্টমস কমিশনারের সাথে একান্ত আলোচনাও করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ মুসা।
এছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্নয় জরুরী সভা ডেকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন ও কন্টেইনার ইয়ার্ডে ডিজি কার্গো (বিস্ফোরক বহনকারী কন্টেইনার) থাকলে তা নিরাপদ স্থানে দ্রুত সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের ইয়ার্ডে যে কন্টেইনারগুলো আছে তা দ্রুত স্কানার করারও তাগিদ দিয়েছে বন্দরের চেয়ারম্যান। মোংলা বন্দরে খালাস করার জন্য কন্টেইনারবাহী জাহাজে কি ধরনের পন্য নিয়ে বন্দরে আসছে এবং কারা আমদানী করছে সে ব্যাপারে সার্বক্ষনিক নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
মোংলা বন্দর ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ মোস্তফা কামাল জানান, সীতাকুন্ডে যে ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জরুরী সভা আহবান করেছে এবং এ সভায় অগ্নিকান্ডের সকল বিষয় আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর আমরা অবগত হয়েছি মোংলা বন্দর জেটিতে এই মুহুর্তে কোন বিস্ফোরক দ্রব্য বা ক্যামিকেল জাতীয় কোন পন্য বোঝাই কন্টেইনার নেই। এছাড়া আমদানীকারকদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি, যে পন্য আমদানী করবে সেগুলো ঘোষনা অনুযায়ী পন্য আমদানী করতে হবে এবং সকল পন্যে তথ্য বন্দরকে জানানোর জন্য আমদানীকারদের আহবান করা হয়েছে।
মোংলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরে যতগুলো আমদানী করা বোঝাইকৃত কন্টেইনার রয়েছে সেগুলোকে স্ক্যানার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বন্দরের সিকিউরিটি সিস্টেম কাজ করছে। আমাদের বন্দরে যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষনিক সচেতন রয়েছি। বন্দরের যে সকল কন্টেইনার আসছে কি পন্য আনার কথা আর কি আনছে, কোথায় রাখছে, কারা গ্রহন করছে এবং কতোদিন বন্দরে মজুদ রাখবে সে ব্যাপারেও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে নিরাপত্তাকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে বিশেষ মহড়ার ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সেফটি এন্ড সিকিউরিটি সিস্টেমস বজায় রেখে দ্রুত কাজ করার ব্যাবস্তা গ্রহন করা হয়েছে বলেও জানায় বন্দরের চেয়ারম্যান।
মোংলা বন্দরের জেটি এলাকায় ৬টি কন্টেইনার ইয়ার্ডে ১৪৪২ টিউজ কন্টেইনার রয়েছে। তার মধ্যে পন্য বোঝাই রয়েছে ৭৬৩টি ও খালী ও অন্যান্য অবস্থানে রয়েছে ৬৭৯টি কন্টেইনার।