নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে উৎপাদিত পোল্ট্রির ডিম ও ব্রয়লার মাংসের মান আরো উন্নত হবে এবং ভোক্তাদের জন্য তা হবে আরও পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও নিরাপদ। শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ডিসকাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনটাই জানানো হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনাব শাহজাদা বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি পালনে অনেকটাই এগিয়েছে বাংলাদেশ। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমে গিয়ে প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে। তিনি বলেন, নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রি শিল্প উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট। নিরাপদ পোল্ট্রি পালন একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। পোল্ট্রি চেইনকে নিরাপদ রাখতে দেশীয় পোল্ট্রি বিজ্ঞানী ও গবেষকরা যথেষ্ঠ অবদান রাখছেন
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই পোল্ট্রির ডিম ও মাংস খায়। সে কারনেই ডিম ও ব্রয়লার মাংসকে অধিকতর মানসম্পন্ন ও নিরাপদ করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি পালনকে উৎসাহিত করতে হলে খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে এবং ছোট-বড় সব ধরনের বাণিজ্যিক ও ব্রিডার খামার এবং ফিডমিলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, শুধু খামারিদের সচেতনতাই যথেষ্ঠ নয়, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।
ওয়াপসা-বিবি’র সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের রপ্তানি শুরু করেছে। পোল্ট্রি মাংস ও মাংসজাত পণ্য রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের জায়গা করে নিতে হলে পণ্যের মান আরো বাড়াতে হবে; সেই সাথে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
ওয়াপসা-বিবি’র নির্বাহী সদস্য শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রির উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। দরকার স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ মি. গর্ডন বাটল্যান্ড বলেন, কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকাতে শষ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রভাবও পড়েছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারনে প্রায় সব দেশের সরকার ভর্তুকী দিতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ায় এখন কর বাড়াতে হচ্ছে। এতে খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ছে।
ড. সান্তিয়াগো রামিরেজ বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন করতে হলে কাঁচামাল বাছাই করা থেকে শুরু করে, ফিড ফর্মূলেশন, মুরগির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ওয়েলফেয়ারসহ নানাবিধ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
ড. ক্লডিও চিমিনেন্তি বলেন, খামারের ভেতরের পরিবেশকে যেমন জীবানু মুক্ত রাখতে হবে তেমনি খামারের বাইরের পরিবেশের প্রতিও যতœশীল হতে হবে।
সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রফেসর ড. এস ডি চৌধুরি, প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, ড. নাথু রাম সরকার, ড. এম এ ছালেক, প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান। টেকনিক্যাল কমিটির আহŸায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম। প্লেনারি সেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এন. সি. দেবনাথ, প্রফেসর ড. মো. আলী আকবর, মো. রফিকুল হক, প্রফেসর ড. মো. মকবুল হোসেন, কালিদাস সরকার প্রমুখ।
সেমিনারের বক্তারা বলেন, দেশে উৎপাদিত মাংসের প্রায় ৪৫ শতাংশ আসে পোল্ট্রি থেকে। বর্তমানে দেশী মুরগি কিংবা ডিম তেমন একটা পাওয়া যায় না; তাই পোল্ট্রি মুরগির উপরই নির্ভর করতে হয়। গরু-খাসির মাংসের দাম যেখানে হু হু করে বাড়েছে; সেখানে বাজারে কমেছে মুরগির মাংসের দাম। এটিই এখন গরীবের আমিষ। তাই আপামর মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে সাশ্রয়ী মূল্যের এ প্রোটিনকে আরও নিরাপদ করতে হবে; প্রান্তিক খামারি ও পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।