বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

নিরাপদ পোলট্রির উৎপাদন আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে -মসিউর রহমান

শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ডিসকাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ওয়াপসা-বিবি এবং বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে ডিম ও মাংস উৎপাদন ও গ্রহণের পরিমাণ যা ছিল, সবাই মিলে যদি আমরা চেষ্টা করি সেটি আরো বাড়ানো সম্ভব। আমাদের নিজেকে বাঁচতে হবে এবং ভোক্তাদেরকে সঠিকভাবে জানাতে হবে যে, আমরা নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদন করছি। আমাদের নিজেদের শিখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সবাইকে শিখাতে হবে কীভাবে নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদন করতে হয়। নিরাপদ পোলট্রির উৎপাদন আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে।

শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ডিসকাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বিবি ও বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান এসব কথা বলেন। আমাদের আরো অনেক শিখতে হবে এবং শেখাতে হবে; আমরা ‍যদি কেবল শিখি কিন্তু সংশ্লিষ্টদের না শেখাই আমাদের আজকের প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন প্রকাশ পাবে না- যোগ করেন মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, পুষ্টি চাহিদা পূরণে আমাদের সবাইকে পোলট্রি ডিম ও মাংসের ওপর নির্ভর করতেই হয়। ডিম ছাড়া স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন করা সম্ভব না। পোলট্রি ডিম ও মাংস শতভাগ নিরাপদ উৎপাদনের জন্য আমরা কাজ করছি। নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমবে, উৎপাদন খরচ কমবে, ডিম ও মাংসের মান বাড়বে, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হবে, ব্যবসাও অনেক টেকসই হবে।

মসিউর রহমান বলেন, আমরা অনেকেই মনে করি, পোলট্রি ফার্ম করা খুবই সহজ একটি কাজ এবং যেখানে সেখানে করে ফেলি, যেখানে সেখানে মন চাইলেই একটা খামার বানিয়ে ফেললাম- এটা করা যাবেনা, আমাদের মানসিকতা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে, এসব ধারনা থেকে  বের হয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, পোলট্রি খামার করার চেয়ে আমাদের এখন বেশি ভাবতে হবে পোলট্রি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে। পোলট্রি লিটার, মৃত মুরগী, হ্যাচারি বর্জ্যসহ যাবতীয় বর্জ্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে- আমার অসচেতনতার কারণে যাতে আমার খামার, আশেপাশের পরিবেশ, অন্যের খামার এবং সর্বোপরি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি আরো বলেন, নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনের জন্য আমাদের অবশ্যই বায়োসিকিউরিটির বেসিক রুলসগুলো মানতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না, রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও পোলট্রি নীতিমালা সঠিকভাবে মেনে খামার করতে হবে। সকল অনিবন্ধিত খামার ও ফিড মিলগুলোকে অবিলম্বে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। আমাদেরকে শুধু মুখে জীবনিরাপত্তার কথা বললে হবেনা, খামারে জীবনিরাপত্তা বাস্তবেই নিশ্চিত করতে হবে।

‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনে এখন অনেকটা এগিয়েছে। আমাদের দেশের খামারিরা সচেতন, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে,  নিরাপদ ডিম ও মাংসের বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে, খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে প্রশিক্ষক তৈরি করা হচ্ছে, রিসার্চ গ্রান্ট দেয়া হচ্ছে, ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে অনেক কাজ করা হচ্ছে’ যোগ করেন মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্রিডার ফার্ম, ফিডমিল ও হ্যাচারিগুলোকে আমরা গুগল ম্যাপের আওতায় আনার কাজ করছে; কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে অনেক বড় কাজ হবে। কোভিড পরিস্থিতির জন্য আমাদের কাজ একটু দেরী হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর কাছে জমা দিয়েছি এবং আশা করি তিনি আমাদের সাথে বসে দ্রুত একটি নির্দেশনামূলক ম্যাপ তৈরি করে দিবেন।

‘আমরা যদি অন্তত ব্রিডার ও ফিডমিলারগুলোকে নিবন্ধের আওতায় আনতে পারি, তাদের যদি একটি আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে পারি- এক্ষেত্রে তাহলে আমরা ৮০-৯০ শতাংশ সফল হয়ে যাবো; যদি আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এগুতো পারি এবং এখন পর্যন্ত আমাদের সহায়তায়ই কাজগুলো করে আসছি। আশা করি, এটি খুব ফলদায়ক একটি কাজ হবে’ বলেন ওয়াপসা-বিবি সভাপতি।

মি. মসিউর বলেন, ব্রয়লার নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট ড. ওয়াসেল সাদাত একটি স্টাডি করছেন। এছাড়া আরো কয়েকটি টীম কাজ করছে। দু’ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও এখন পোলট্রি শিল্প নিয়ে কাজ করছে। ভোক্তাদের কাছে দেশের পোলট্রি শিল্প এখনো অনেক পিছিয়ে আছে, এটাই উনারা ধারনা করেন। পোলট্রি শিল্প এখন কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে, সেটি উনারা জানেন না। তাদেরকে দেখাতে হবে, বুঝাতে হবে; তাই আমাদের প্রমোশনাল কাজ করতে হবে। মিডিয়ার সাথেও আমরা কাজ করছি। আমরা সকলে মিলে এক হয়ে কাজ করলে অবশ্যই সাফল্য আসবে।

‘আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। সামনের দিনগুলোতে পোলট্রি ডিম ও মাংসের চাহিদা বাড়বে, ২০১৯ সনে পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের রপ্তানি শুরু হয়েছে, পোলট্রি মাংস, ডিম, মাংসজাত খাবার রপ্তানি অচিরেই শুরু হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে পোলট্রি সেক্টর আরো বড় অবদান রাখবে। আমরা রপ্তানি করতে পারি কিন্তু তার আগে আমাদের নিজেদের পণ্যের মানের ব্যাপারে নিজেরা নিশ্চিত হতে হবে’ জানান মসিউর রহমান।

This post has already been read 4964 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …