বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

পোলট্রি শিল্প সবসময়ই হুমকির মধ্যে থাকে, এখন আরো বড় হুমকির মধ্যে আছে -শামসুল আরেফীন খালেদ

শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ডিসকাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ফিআব সভাপতি ও ওয়াপসা-বিবি’র নির্বাহী সদস্য শামসুল আরেফিন খালেদ (অঞ্জন)।

নিজস্ব প্রতিবেদক: পোলট্রি শিল্প সবসময়ই হুমকির মধ্যে থাকে, এখন আরো বড় হুমকির মধ্যে আছে এবং এটা সবসময়ই থাকবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো যদি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে না নেয়া হয়, সঠিক লোকগুলো যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজগুলো না করেন এবং সেই রিসার্চ পেপারগুলো যদি আমাদের কাছে সঠিক সময়ে না আসে, তাহলে অনেক সময় অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হই এবং সেটির ওপর ভিত্তি করেই শিল্প এগিয়ে যায় এবং অনেক সমস্যার মধ্যে। এর বাইরে ক্রেডিবিলিটি নাই এমন অনেক রিসার্চ পেপার বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া হয়, অনেক বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে  এই সেক্টর।

শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ডিসকাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফিআব সভাপতি ও ওয়াপসা-বিবি’র নির্বাহী সদস্য শামসুল আরেফিন খালেদ (অঞ্জন) এসব কথা বলেন।

সেমিনারের এক পর্যায়ে আগত অতিথিদের পক্ষ থেকে দেশের ক্ষুদ্র খামারিদের বাঁচানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যায় এমন লিখিত এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল আরেফীন খালেদ বলে, প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতিকেজি ব্রয়লার উৎপাদনে ৭-১১ টাকা ডিলারদের কাছে চলে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রচলিত মডেলগুলো টেকসই হবে না। খামারি একটা সময় এমন হবে যখন খামারিরা আর পারবে না, তখন সেক্টরকে দুই দিকে চলে যায়; হয় কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ যেতে হয় নয়তো বড় বড় যারা শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেরাই বাচ্চা, ফিড থেকে শুরু করে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদনে চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে আমাদের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ যাওয়া উচিত। অন্যথায় আমরা সবাই যদি বড় বড় প্রোডাকশন শুরু করি, তখন আর খামারিরা থাকবে না। খামারি ও ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে আমাদের এখন কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর দিকেই যাওয়া উচিত।

‘সেক্ষেত্রে আমরা যারা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করবো তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে হবে- নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে, খামারিদের ক্রেডিট (বাকী) দিতে হবে, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে, লজিস্টিক ইমপ্রুভ করতে হবে, প্রসেস চিকেনের  যে কাজটা সেটি শিখাতে হবে’ যোগ করেন শামসুল আরেফিন খালেদ ।

‘এখন ডিলারদের তাহলে কি হবে? ডিলারদের আমরা কনভার্ট করবো, ডিলারদের নিয়ে কীভাবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করা যায় সে অনুযায়ী একটি মডেল দাড় করাতে হবে। এখন যারা ফিড বা বাচ্চার ডিলার তাদেরকে মুরগি বা ডিমের ডিলারে রুপান্তর করে একটি মডেল দাড় করানো সম্ভব। এভাবে ডিলারদের সম্পৃক্ত করে আস্তে আস্তে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং যেতে হবে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন,  খামারিদের স্বার্থে, উৎপাদকদের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে যদি কিছু সময়ের জন্য ডিলারদের সাথে ডিসকন্টিনিউ করতে হয়, সেটি দুঃখজনক হলেও আমাদের করতে হবে। কারণ, দেশের খামারি ও ভোক্তাদের কাছে আমাদের ৎদায়বদ্ধতা আছে। ডিলারদের কাছেও আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, তাদের কাছে এখন যে পরিমাণ টাকা আছে সেগুলো দিয়ে বড় বড় ফার্ম করে তারা কিন্তু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ যেতে পারেন। আমাদের সর্বোচ্চ চেস্টা থাকবে তাদেরকেও সম্পৃক্ত করা। কিন্তু এখন যে মডেলটি আছে, প্রতিযোগিতা করে করে হিডেন কমিশন,  এক্সপোজ কমিশন, বিভিন্ন রকম ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি এগুলো দেয়ার পরে বর্তমান যে পরিস্থিতি পোলট্রি সেক্টরে আছে, তা কারো জন্যই সুস্থ পরিস্থিতি নয়। আমরা ডিলারশীপ বন্ধ করবো না, ডিলারশীপের বর্তমান যে ন্যাচারটি আছে সেটি পরিবর্তন করতে হবে।

একদিন বয়সী বাচ্চার দামের প্রসঙ্গে শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বিগত ৫ বছর বা ৬০ মাসের মধ্যে একদিন বয়সী বাচ্চার দাম মাত্র ৪০ মাস ৩০ টাকারও কম ছিল, ১০ মাস ছিল ৭০ টাকার মতো, এই পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কারণ, আমরা কেন এত বেশি উৎপাদন করি যে মাঝে মধ্যে বাচ্চার দাম ৫টাকারও কম যায় বা কেনইবা মাঝে মাঝে লুজ করি যে দাম ৭০টাকা পর্যন্ত যায়! বাচ্চার দামে যাতে খামারি এবং উৎপাদক দুপক্ষই উইন উইন পজিশনে থাকে সে পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে এবং আমাদের সবাইকে সে পরিকল্পনা করেই এগুতে হবে।

This post has already been read 5048 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …