নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদে অভাবনীয় সাফল্যের জায়গায় এসেছে। এই খাতে সরকারের অনেকগুলো গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসিআইসহ অন্যান্য বেসরকারি খাতকেও সরকার সবসময় উৎসাহিত করছে। বেসরকারি খাত কৃত্রিম প্রজননের জন্য বাইরে থেকে উন্নত জাতের পশু আমদানি করছে, ল্যাবরেটরি স্থাপন করছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত উন্নত জাতের পশু থেকে মাংস ও দুধ বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সরকার চায় এ কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে। তৃণমূল পর্যায়ে এ খাতের উৎপাদন বাড়াতে মানসম্পন্ন সিমেন উৎপাদন প্রয়োজন, কৃত্রিম প্রজননের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি এসিআই এর এ ধরণের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা দরকার ।
বুধবার (১৫ জুন) গাজীপুরের শ্রীপুরে এসিআই অ্যানিমেল জেনেটিক্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি এসব কথা জানান। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ করছে বলে জানান, এ সময় মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষির বিস্তার না হলে দেশ থমকে যাবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অদূর ভবিষ্যতে দুধেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তাঁর সরকার মনে করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের সাহায্য করতে হবে। তারা স্বাবলম্বী হলে দেশ স্বাবলম্বী হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিদের সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সরকার চায় প্রাণী খাদ্য, মাছের খাদ্য দেশে উৎপাদন হোক। এক্ষেত্রে এসিআই এর মত অন্যান্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এসিআই কৃত্রিম প্রজননের সিমেন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও খামারিদের সরবরাহ করছে।
কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা নেয়া খামারিদের যেন কষ্ট না হয়, সেটা এসিআইকে লক্ষ্য রাখার জন্য এস আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমান সরকার বেসরকারি খাতবান্ধব সরকার। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে যারা বিনিয়োগ করতে চান তাদের জন্য সরকার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপ্রতিরোধ্য গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে। অথচ একটা মহল আছে যারা এদেশের ভালো দেখলে তাদের ভালো লাগে না। তারা পদ্মা সেতু নিয়েও অপপ্রচার করছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ালে দেশ সমৃদ্ধ হবে। বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান আরও বিকশিত হবে। সবার মুখে হাসি ফুটবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আগুন সন্ত্রাসী, পেট্রোল সন্ত্রাসী এবং দেশ ধ্বংসের রাজনীতি যারা করে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু এসময় বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এসিআই লিমিটেডের কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তা ও খামারিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে কোরবানির পশু সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে বাংলাদেশে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানির জন্য থেকে ভারত, মিয়ানমার বা কোন দেশ থেকে একটা পশুও আনার দরকার নেই। পর্যাপ্ত পশু দেশে আছে। বিদেশ থেকে অবৈধপথেও যাতে পশু আসতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোরবানির পশু নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। দেশে উৎপাদিত পশুই কোরবানির জন্য যথেষ্ট। প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের এ গর্বের জায়গা আমরা কোনভাবে নষ্ট হতে দেবো না। বাইরে থেকে কোন পশু আসবেনা, দেশে উৎপাদিত পশুই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোরবানির সময় প্রতিটি হাট তদারকির জন্য ভেটেরিনারি ডাক্তার থাকবে। হাটে তারা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। রোগ সংক্রমিত কোন পশু বা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইনজেকশন দেওয়া পশু হাটে আসলে সেটি সনাক্ত করা সম্ভব হবে।
গোখাদ্যের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল থাকলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন উল্লেখ করে এ সময় মন্ত্রী বলেন, গোখাদ্যের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমাতে হবে। সরকার চায় গোখাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন হোক। এ শিল্প স্থাপনে কর অব্যাহতিসহ সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দেবে। পাশাপাশি কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎপাদন বাড়লে এবং ব্যবসায়ীরা কম মুনাফা করলে মাংসের দাম কমবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এর আগে এসিআই এর জেনেটিক্স ল্যাব ও ব্রিডিং স্টেশন পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।