নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘গবাদিপশুর উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান পলিসির পুনর্মূল্যায়ন ও দ্রুত জাত উন্নয়ন প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী। তিনি বলেন, ডিম ও মাংস উৎপাদনে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ । দুধ উৎপাদনে আমরা অনেকটা এগিয়ে আছি এবং আরো এগুতে হবে। দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন কিছু উদ্যোগের, যেমন দুধ ও মাংস উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনগবাদিপশুর জাতের দ্রুত উন্নয়ন। উন্নতমানের পশুখাদ্য সরবরাহ, উপযুক্ত ব্যাবস্থাপনা ও চিকিৎসা। গবাদিপশুর উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান পলিসি পূনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। মাংসের জন্য একটি জাত পলিসিতে অন্তর্ভুক্তকরণ।
বুধবার (১৫ জুন) গাজীপুরের শ্রীপুরে এসিআই অ্যানিমেল জেনেটিক্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু এসময় বক্তব্য প্রদান করেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এসিআই লিমিটেডের কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তা ও খামারিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. আনসারী বলেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ এসিআই প্রাণিসম্পদ-এর সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গবাদিপশুর খাদ্য ও পুষ্টি, চিকিৎসা ও প্রতিশেধক, খামার ব্যবস্থাপনা সামগ্রী, আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত যন্ত্রপাতি সরবরাহ যেমন আল্ট্রাসনোগ্রাম, ম্যাষ্টাইটিস ডিটেকটর, খামারের তাপ ও আর্দ্রতা নির্ণয় যন্ত্র, খামারি অ্যাপস ইত্যাদি এবং সর্বোপরি গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের সিমেন সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। ‘২০১৯ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু করলেও করোনা মহামারীর কারণে এতদিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি’ জানান তিনি।
তিনি বলেন, এসিআই এনিম্যাল জেনেটিক্স আগামীতে এ সেক্টরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমূহ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে যেমন-সেক্সড সিমেন ব্যবহার, এম্ব্রায়ো ট্রান্সফার, ফার্টাইল এম্ব্রায়ো ইম্পলান্ট ইত্যাদি। এ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ভারতের পুনে-তে আমাদের পার্টনার গোদরেজ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করছে এবং ফার্টাইল অ্যামব্রায়ো থেকে উৎপাদিত প্রতিটি গাভী গড়ে প্রায় ৪০ লিটার দুধ দিচ্ছে। খামারীদের মূল্যবান গবাদিপশুর জন্য বীমা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আগামীতে দুধ ও মাংস সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপনণ ব্যবস্থা হাতে নেয়া হবে, ফলে খামারীগণ তাদের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবেন।
ড. আনসারী আরো বলেন, খুবই আশার কথা আজকে তরুণ প্রজন্ম প্রাণিসম্পদ সেক্টরে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা উন্নতমানের বকনা বা ষাঁড় যোগাড় করতে পারছেনা। এই বিষয়টি বিবেচনায় এনে আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত জাতের অথচ অনাদরে অবহেলায় পালিত হচ্ছে সেগুলো সংগ্রহ করে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে আগ্রহীদের মধ্যে বিতরণ করবো। সব থেকে বড় কথা হলো আপনার আন্তরিকতায় এই দেশের প্রাইভেট সেক্টর উৎসাহিত হয়েছে এবং পাবলিক ও প্রাইভট সেক্টর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। যা এই দেশের ডেইরী সেক্টরের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে।
গাজীপুরে অবস্থিত এসিআই ফ্যাক্টরি এলাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, একসময় এলাকাটি ছিল একটি নিভৃত জনপদ। ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস আনয়ন,রাস্তা নির্মান, ল্যান্ড ফোন ইত্যাদি স্থাপনে এসিআই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। গড়ে উঠেছে এক নাগরিক জনপদ, যা সবার আন্তরিক সহযোগিতার ফসল। এসিআই ১৯৯৬ সনে গাজীপুর অঞ্চলে এসিআই ফর্মুলেশন ফ্যাক্টরি স্থাপনের পর থেকে পর্যায়ক্রমে এসিআই ইয়ামাহা সহ আরও ৫ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে বহু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, উল্লেখ করেন ড. আনসারী।