ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : সুন্দরবনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের দায়ে সাত জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) ভোরে খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া ও মাদারবাড়ীয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে়। জব্দ করা চিংড়ি মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়।
দুপুরে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আটক সাত জন হলেন, খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের মো. মোস্তফা সানা (৪০), মো. মিজানুর রহমান (২৮), মো. আছাদুল ইসলাম (৩৭), মো. আছাদুল ইসলাম (৩৫), মঠবাড়িয়া উপজেলার আনারুল (৪০), মহারাজপুর এলাকার মো. সাইফুল্লাহ গাজী (৩০) ও মিলন গাজী (৩৭)। এ সময় ৪ নম্বর কয়রা এলাকার ইব্রাহিম সানার ছেলে বাসার সানা ( ৫৫) পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, বাশার সানা কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন নিষিদ্ধ সময়ে সুন্দরবনের খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সিন্ডিকেট।
জানা যায়, গোপন খবর পেয়ে কয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নিজে উপস্থিত থেকে চারটি নসিমনসহ আট জনকে আটক করেন। তবে এ সময় একজন পালিয়ে যান। পরে চিংড়িসহ অন্য সাত জনকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুর ইসলাম।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, ভোরে কয়েকটি নছিমনে করে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে। পরে চিংড়ি বোঝাই চারটি নছিমন জব্দ করা হয়। তিনি বলেন, আটক ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে মাছগুলো সুন্দরবনের মাছ ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের। তার নির্দেশে এ মাছ আড়তে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আমিনুল হক বলেন, জুন মাস থেকে তিন মাস সুন্দরবনে সব প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। তার পরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা সুন্দরবন থেকে মাছ আহরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে ঘোষণা দিয়েছেন যারা সুন্দরবন থেকে বিষ দিয়ে মাছ ধরবে তাদের সন্ধান দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ ধরা ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ। এ বছর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ১ জুন থেকে সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।