ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আয়োজনে “International Conference on STEM and the 4th Industrial Revolution 2020” শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুক্রবার (১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সম্মেলনের উদ্বোধনপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে নানামুখী চাহিদার সাথে সাথে চ্যালেঞ্জও উদ্ভূত হচ্ছে। জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। প্রযুক্তির সংশ্লেষ ও অনুসঙ্গে মানুষের কর্মপরিবেশ, ব্যক্তি ও জীবন সংস্কৃতিতে পট পরিবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখেই প্রযুক্তি ও পরিবর্তনকে জীবনধারার সাথে খাপ খাওয়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লব মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যে প্রেক্ষিত সামনে এসেছে তাতে নানামুখী চিন্তা, উদ্ভাবনা, সম্ভাবনার সাথে সাথে অনেক চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষের অনেক কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক উপস্থিতি জায়গা করে নেবে। এর ফলে জীবনধারায় পরিবর্তন সূচিত হবে। জীবন সহজ হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আরও অনেক কিছুরই সংযোজন হবে। কিন্তু মানুষের কাজের পরিবর্তিত ক্ষেত্র ও চাহিদাকেও পূরণ করতে হবে। সে কারণে গবেষণা, উদ্ভাবনা ও নতুন নতুন ধারণার প্রয়োজন হবে। কোলাবরেশন বা ক্লাস্টার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণার ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রির সাথে ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগ এখন খুবই জরুরি।
প্রধান অতিথি বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি এতোটাই পরিবর্তনশীল যে, আমরা শিক্ষানীতি ও কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে যেয়ে যে সময় অতিবাহিত করছি, তার মধ্যেই আবার নতুন প্রয়োজন, চাহিদা ও পরিবর্তন উদ্ভূত হচ্ছে। গত এক যুগ আগে যে শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছিলো, ইউজিসি যে উচ্চশিক্ষার কৌশল কয়েকবছর আগে প্রণয়ন করেছিলো তার মধ্যেই আবির্ভূত হয়েছে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব। ফলে এসব কৌশল ও নীতিকে সময়োপযোগী করার তাগিদ এসেছে। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্তি করেই আমাদের সামনে এগোতে হবে। তবে এক্ষেত্রে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে অত্যন্ত চমৎকার ধারণা এবং সময়োপযোগী পরিস্থিতিতে আয়োজিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে তাঁর সম্পৃক্ততা এবং নানাক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
চিফ প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। কেননা আমরা এখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের জানার দরকার, এর প্রেক্ষিত কি ও করণীয় কি সেটাও জানা দরকার। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা এবং অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা দরকার। এই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরই বর্তায়। তাই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন অনুসঙ্গের চাহিদা পূরণে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এবং গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি প্রধান অতিথিসহ দু’জন কী নোট স্পিকার এবং এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি গবেষক, শিক্ষক, প্রতিনিধিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সম্মেলনে প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। তিনি এ সম্মেলনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনপর্বে কী নোট স্পিকার হিসেবে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন এর বার্টলেট কক রিজেন্ট প্রফেসর ইমেরিটাস প্রফেসর ড. স্টিভেন এ. মুর। উভয় কী নোট স্পিকারের মধ্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ১ম-৩য় শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন অর্জন-অনার্জন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব, প্রযুক্তি, মানবিকতা, শিক্ষা ও গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অপর কী নোট স্পিকার প্রফেসর ড. স্টিভেন এ. মুর ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে জ্ঞানতত্ত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকের বিভিন্ন প্রেক্ষিত উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে মানবিক মূল্যবোধের দিকটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনপর্বে সভাপতির বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সভাপতি বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আফরোজা পারভীন। তিনি সম্মেলনের প্রধান অতিথি, দু’জন কী নোট স্পিকারসহ অংশগ্রহণকারী সকলকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে এই সম্মেলন আয়োজনে উৎসাহ, প্রেরণা দিয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখার জন্য উপাচার্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও বলেন, আয়োজক কমিটি এটা তাদের একাডেমিক দায়িত্ব থেকেই সবাই মিলে টিমওয়ার্ক করেছেন। এই সম্মেলন থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেট স্কুলসহ অন্যান্য স্কুলে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়ে করণীয়, প্রস্তুতি ও প্রয়োগ বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস। সম্মেলনের মুখ্য বিষয়াদি তুলে ধরেন সম্মেলনের টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. শামীম আহসান।
সম্মেলনের উদ্বোধনপর্বে আয়োজক কমিটির প্রদত্ত সম্মাননা ক্রেস্ট প্রধান অতিথি ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও কী নোট স্পিকার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর হাতে তুলে দেন চিফ প্যাট্রন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এছাড়া আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি প্রফেসর ড. আফরোজা পারভীন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। পরে টেকনিক্যাল সেশন শুরু হয়।
জানানো হয়, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, ভারত ও নেপাল থেকে প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি ৬১টি ইনস্টিটিউট থেকেও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন।